ভোগাই নদীতে ভাঙন শুরু, অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত

টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী আকস্মিক বন্যা (2)টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নদী ভোগাইয়ের ১৩টি স্থানে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। আর নদীর তীর গড়িয়ে প্লাবিত হচ্ছে চেল্লাখালী নদীর পানি। এতে উপজেলা ও পৌরসভার অর্ধশত গ্রাম আকস্মিকভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
শনিবার (১২ আগস্ট) পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর তীর উপচে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঢলের পানি আশপাশের গ্রামে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

ভোগাই নদীর নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগারে একটি, রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের মন্ডলিয়াপাড়া ও ভজপাড়ায় দুইটি, নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের নিচপাড়া ও খালভাঙ্গায় তিনটি, বাঘবেড় ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় তিনটি এবং পৌরসভার নিচপাড়ায় একটি, খালভাঙ্গায় একটি ও উত্তর গড়কান্দা এলাকার দু’টি স্থান মিলে মোট ১৩টি স্থানে তীর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে আরও বেশকিছু এলাকায়। ভাঙনকবলিত নদী পাড়ে প্রায় এক হাজার মিটার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার আটটি ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। এসব এলাকার ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানির প্রবাহে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে অসংখ্যা কাঁচা-পাঁকা রাস্তা। বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় বেশকিছু বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশকিছু এলাকায়।

টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বন্যাইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া জানান, সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। অন্যদিকে চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি-পলাশীকুড়া নামক স্থানের স্টিলের ব্রিজটি পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে। এতে চার গ্রামের অন্তত দুই হাজার মানুষ নদী পারাপারে দুর্ভোগে পড়েছে বলে জানান।

বন্যা কবলিতরা জানান, শুক্রবার (১১ আগস্ট) মধ্যরাতে ভোগাই নদীর বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এ সময়ে দু’কূল উপচে ঢল নামে চেল্লাখালীর আশপাশ এলাকায়। এসময় তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশপাশের উঁচু এলাকায় আশ্রয় নেন।

আকস্মিক বন্যায় শেরপুরে নদীভাঙনবন্যা কবলিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিগত কয়েক বছর যাবত ভোগাই নদীর বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভাঙা অব্যাহত ছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও এসব বাঁধ রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসেনি।’

এদিকে, শনিবার সকাল থেকেই উপজেলা প্রশাসন বন্যা কবলিত বেশকিছু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরফদার সোহেল রহমান।

অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানির স্রোতে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর, ধানশাইল, কাংশা, নলকুড়া, গৌরীপুরসহ  বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন। বহু রাস্তাঘাট, ছোট ছোট পুল কালভার্ট, কাঁচা-পাকা বাড়িঘরসহ আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ জেড এম শরীফ হোসেন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন।

/এসএমএ/