একই পরিবারের এই চার শিশুর মৃত্যুর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়া মাদ্রাসার সুপারকে দায়ি করেছেন ওই মা। তার অভিযোগ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পেলে তাকে আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে হতো না। হারাতে হতো নিজের তিন সন্তান ও দেবরের সন্তানকে।
এ ঘটনার পর মাদ্রাসা সুপারকে কারণ দর্শানো নোটিশ করেছে মাদ্রাসা কমিটি।
কাহারোল থানা পুলিশ জানায়, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় গত ১৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে কাহারোল উপজেলার হাসিলা গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী সোনাভান খাতুন তার ছেলে শহিদ আলী (১৩) দুই মেয়ে চুমকি (১১) ও স্মৃতি (৭) এবং স্বামীর চাচাত ভাই সাঈদ আলীর ছেলে সিহাদকে (৭) নিয়ে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দুরে আশ্রয়কেন্দ্র ঈশ্বরগ্রাম দাখিল উলুম মাদ্রাসায় যান। এসময় সেখানে থাকা নৈশ্য প্রহরী আব্দুর রশিদকে দরজা খুলে দিতে বলেন। বিষয়টি নৈশ্য প্রহরী মোবাইলে মাদ্রাসার সুপার ফানসুর রহমানকে জানালে তিনি দরজা খুলে দিতে নিষেধ করেন। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে বাড়িতে ফেরার সময় পানির প্রবল স্রোতে চার শিশু পানিতে তলিয়ে যায়। পরে সোনাভান খাতুন চিৎকার করলে এলাকাবাসী এসে পানি থেকে চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
এলাকাবাসী জানায়, আশ্রয়কেন্দ্রে গরু-ছাগল রাখায় ভবনের কক্ষের রঙ নষ্ট ও ময়লা হওয়ায় মাদ্রাসা সুপার একজন শিক্ষকসহ কর্মচারীকে গালাগাল করেন। মাদ্রাসা সুপারের এ অচরণে পরের দিন সোমবার (১৪ আগস্ট) ওই মাদ্রাসা সুপারকে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ধাওয়া খেয়ে মাদ্রাসা সুপার পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন এসে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিলে লোকজন বিক্ষুদ্ধ লোকজন শান্ত হন।
কাহারোল থানার ওসি মনসুর আলীর বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লোকজন জানায়, এলাকায় পানি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওই মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হয়। সোনাভান মাদ্রাসায় আসার আগেই অনেকেই গৃহপালিত পশুসহ ওই মাদ্রাসায় আশ্রয় নেন। কিন্তু সোনাভান খাতুন এসে নোংরা পরিবেশ দেখে গালাগালি করেন এবং মরতে হলে বাড়িতে গিয়েই মরবো বলে চার শিশুকে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেন। ফেরার পথে পানিতে পড়ে ওই চার শিশুর মৃত্যু হয়।’ তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান ওসি।
ওই এলাকার সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ‘ওই নারী সেখানে গিয়ে রাগারাগি করে করে বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে এক সন্তান পানিতে পড়ে যায়। পরে তাকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য শিশুরাও পানিতে পড়ে যায়। এমনটিই শুনেছি।’
আরও পড়ুন
দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে