মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখতে চান মাসুদের বাবা

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার দেহরক্ষী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মাহবুবুর রশিদ মাসুদভোরে ফজরের নামাজের পর মোনাজাত করে ছেলের খুনিদের বিচার আর দুই নাতির মঙ্গল কামনা করেন হারুন অর রশিদ। দিন শুরু করেন ছেলের কবর জিয়ারত করে। একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর হয়ে গেলেও ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখতে না পাওয়ায় হতাশ তিনি। মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মাহবুবুর রশিদ মাসুদের বাবা হারুন অর রশিদ।
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পর সোমবার (২১ আগস্ট) হারুন অর রশিদ তার কষ্টের কথাগুলো এভাবেই জানান। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার দেহরক্ষী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মাহবুবুর রশিদ মাসুদ।

মাসুদের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় মাহবুবের আত্মাহুতির কারণেই সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিহত মাহবুবের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ফুলবাড়ি স্কুলের পাশে তার ছেলের সমাধি স্থলটি সম্প্রতি পাকা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন ওখানেই অবসর সময় কাটাই। কিন্তু রাস্তা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে সেখানে নিয়মিত যেতে পারছি না। তাছাড়া দৃষ্টিনন্দন সমাধি স্থলটির ওপর শেয়াল-কুকুর চলাফেরা করছে। সমাধিস্থলটির সৃষ্ট সংরক্ষণের জন্য করবস্থানের সীমান প্রাচীর, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ছেলের হত্যাকরীদের বিচার দাবি করে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হামলা এটি। কিন্তু বিচার হচ্ছে না। মামলাটির দ্রুত বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখেই মরতে চাই।’

তবে শত কষ্ট ও হতাশার মধ্যেও নিহত ছেলেকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত এই বাবা। শেখ হাসিনাকে ঘাতকদের বুলেট থেকে রক্ষায় তার ছেলের জীবন উৎসর্গ করার ঘটনাটি এখনও গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন হারুন অর রশিদ।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার দেহরক্ষী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মাহবুবুর রশিদ মাসুদস্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিনা বানু বলেন, ‘মাহবুবের সমাধিস্থল ও কবর স্থানের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ভাই বোনদের চাকরি, বৃদ্ধ বাবার নামে আজীবন ভিজিডি কার্ড ও বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

এক সময়ের বিড়ি তৈরির কারিগর পিতা হারুন অর রশিদের দ্বিতীয় ছেলে ছিলেন মাহবুব। বাড়ির পাশের ফুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়ার হাতে খড়ি। পাশের উপজেলা পাংশার বাহাদুরপুর শহীদ খবির উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। চাকরি পাওয়া পর পাঁচ বোনের তিন বোনকে বিয়ে দেন মাহবুব। ছোটদের লেখা পড়ার খরচও চালাতেন তিনি। পরে ২০০০ সালের দিকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা নেয়ার পর শেখ হাসিনার গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন মাহবুব। বিশ্বস্ততা অর্জন করায় অল্প সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দায়িত্ব পান তিনি।

আরও পড়ুন
‘আমাকে দেখার দরকার নেই, আমার নেতা-কর্মীদের চিকিৎসা করো’

‘সব রাশ ফুটেজ নিয়ে যাওয়া হয়’

‘গ্রেনেড হামলার দুদিন পরেও নেত্রী ছিলেন শোকে বিহ্বল’

‘খবর দেখলেই সেই স্মৃতি মনে পড়ে’