২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরীর কোনও খোঁজ আজও বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় ১০ বছর ধরে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে থাকা এই হারিছ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতেও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই। শুধু তাই নয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি হারিছ চৌধুরীকে লাপাত্তা দেখানো হয়েছে। হারিছ চৌধুরী তাই সিলেটবাসীর কাছে এক রহস্য।
জানা গেছে, হারিছ চৌধুরী সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা কানাইঘাটের বাসিন্দা। তার নানাবাড়ি ভারতের করিমগঞ্জে। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। দুর্নীতির মামলায় ৬৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হারিছ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই লাপাত্তা।
স্থানীয় বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন হারিছ। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হওয়ার পরই তিনি গড়তে শুরু করেন সম্পদের পাহাড়। বিএনপি সরকারে থাকার সময়ে হওয়া ভবনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেও জানা যায়।
সিলেট বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, হারিছ চৌধুরী বেশ কয়েকবার দেশে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু মামলার ভয়ে তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। জানা গেছে, হারিছ চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে আছেন। তবে রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয়। সিলেটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তারাই তাকে দেশে না ফিরতে পরামর্শ দিয়েছেন।
সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নাম ছিল হারিছ চৌধুরীর। ২০০৮ সালে একাধিক মামলায় তার ৬৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে পলাতক অনেক বিএনপি নেতা দেশে ফিরলেও হারিছ চৌধুরী ফেরেননি। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন— তা আজও অজানা। দেশে থাকা তার আত্মীয়-স্বজনরাও এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে রাজি নন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা, ঢাকায় ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে হারিছ চৌধুরী জড়িত থাকার প্রমাণ পায় তদন্তকারী সংস্থা। তবে গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটে শেষ পর্যন্ত নাম যায়নি হারিছ চৌধুরীর।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী কোথায় তা খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি। একাধিক মামলার আসামি সে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। যেখানেই সে থাকুক, তাকে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক।’
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন। ওই হামলায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।