ফুলের দোকানদারকে মারধরের অভিযোগ, বিচারকের বিচার দাবি

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন টুটুলমেহেরপুর বড় বাজারের একটি ফুলের দোকানের মালিককে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত ওই দোকান মালিকের স্বজনরা মেহেরপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জজ বরারবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে, বিচারক ছানাউল্ল্যাহর বিচার দাবি করে বুধবার (২৩ আগস্ট) সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মেহেরপুর যৌথ ব্যবসায়ী সমিতি।
জানা গেছে, মারধরের ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট)। ওইদিন দুপুরে বিবাহবার্ষিকীর কাজ নিয়ে টুটুল ফুল সেন্টারে জেলা জজ আদালতের এক দফতরিকে পাঠিয়েছিলেন মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ মিয়া। কাজ করতে দেরি হবে বলে ওই দফতরিকে জানান দোকানের মালিক টুটুল হোসেন (২৩)। জবাবে টুটুলকে দেখে নেওয়ার কথা বলেন ওই দফতরি। পরে মেহেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিক টুটুলকে আটক করে বিচারকের কাছে নিয়ে যান। বিচারক টুটুল হোসেনকে মারধর করেন। পরে আহত টুটুল হোসেনকে মেহেরপুর জেনালের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত টুটুল হোসেন বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আনুমানিক দুপুর ২টার সময় জেলা জজ আদালতের এক দফতরি শহরের বড়বাজার এলাকার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে একটি বিবাহবার্ষিকীর কার্ড লিখে দিতে বলেন। হাতে বেশকিছু কাজ জমে থাকায় দুই ঘণ্টা দেরি হওয়ার কথা জানাই আমি। এর জবাবে দফতরি আমাকে বলেন, ‘তোর বাপ এলে ঠিকই কাজ হবে।’’ ওই দফতরি চলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর পুলিশের একটি দল টুটুলকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন টুটুল।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে টুটুল বলেন, ‘সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহর খাস কামরায় আমাকে নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় পুলিশের রুল ও নিজের পায়ের জুতা দিয়ে আমাকে মারধর করেন ম্যাজিস্ট্রেট। পরে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।’ টুটুল এখন সদর জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ৩নং কেবিনে ভর্তি আছেন।
এই ঘটনায় আহত টুটুলের পক্ষে তার মামা রাশেদুল ইসলাম মঙ্গলবারই মেহেরপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জজ বরারবর লিখিত অভিযোগ করেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ মিয়ার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনএদিকে, ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ মিয়াকে প্রত্যাহারসহ তার বিচারের দাবিতে বুধবার সকালে মেহেরপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসময় তারা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরের সব দোকান বন্ধ রাখেন।
মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপুর নেতৃত্বে মানববন্ধনে ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহর বিচার ও তাকে প্রত্যাহারের দাবি করে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী নেতারা। মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী রশিদ হাসান খান আলো, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খোকন, হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল, সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, নাপিত রুবেল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহকে প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মনিরুজ্জামান দিপু বলেন, ‘দাবি না মানা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।’ একজন বিচারক হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ কিভাবে এমন একটি ‘ন্যাক্কারজনক’ ঘটনা জানিয়েছেন, সেই প্রশ্ন রাখেন আমিনুল ইসলাম খোকন।
ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, নাপিত রুবেল হোসেন ও হোটেল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের ওপরও নির্যাতন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুন-
ভাঙছে সৈকত, প্রাণ হারাচ্ছে কুয়াকাটা

পঞ্চগড়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দিলেন বাবা