মালিতে নিহত শান্তিরক্ষী জাকিরুলের পরিবার অকূল পাথারে

স্বজনদের আহাজারি (ছবি- প্রতিনিধি)

‘কত স্বপ্ন ছিল আমাদের। দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাবো। সব শেষ হয়ে গেছে। আমার নিজেরই তো পড়াশুনা শেষ হয়নি এখনও। ছেলে দু’টোকে নিয়ে এখন আমি কার কাছে যাবো? তাদের পড়ালেখার কী হবে? খাওয়া বা পরার-ইবা কি হবে?’

গত ২৪ সেপ্টেম্বর মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হওয়া জাকিরুল ইসলামের লাশ রবিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এরপর জাকিরুলের স্ত্রী তামান্না সরকার এভাবেই বিলাপ করছিলেন। স্বজন ও প্রতিবেশীদের কোনও সান্ত্বনাই তাকে থামাতে পারছিল না।

দিন কয়েক আগেও তামান্না সরকারের চোখে ছিল সোনালি স্বপ্ন। এখন তার দুই চোখজুড়ে শুধুই জল আর অমানিশার অন্ধকার। স্বামী জাকিরুলকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন তিনি। বিলাপের সময় সে কথাগুলোই বলছিলেন বার বার।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকিরুলের বাবার নাম সফির উদ্দিন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জাকিরুল সবার ছোট। ২০০১ সালের ৩ মে জাকিরুল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এর কিছু দিনের মাথায় তিনি ময়নসিংহের মেয়ে তামান্না সরকারকে বিয়ে করেন। দুই ছেলের জন্ম হয় এই দম্পতির ঘরে। সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে ল্যান্স করপোরাল হন জাকিরুল। চলতি বছরের ১৭ মে বাংলাদেশ ছেড়ে আফ্রিকার মালিতে শান্তি রক্ষার কার্যক্রমে যোগ দেন তিনি।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর মালিতে দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণে আরও দুই সহকর্মীর সঙ্গে নিহত হন জাকিরুল। এর পর রবিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ সেনানিবাসের মেজর ফারহাদ আন নাঈমের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা জারিয়ার সরকার বাড়িতে জাকিরুলের লাশ নিয়ে আসেন। ওই সময় জাকিরুলের স্বজনরা আহাজারি শুরু করেন। তাদের আহাজারিতে বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া।

সেনা সদস্যরা জাকিরুলের লাশ নিয়ে যাচ্ছেন (ছবি- প্রতিনিধি)

ছেলের লাশ দেখে অঝোরে কাঁদছিলেন জাকিরুলের মা জোছনা সরকার। তিনিও বিলাপ করে করে বলছিলেন, ‘ছেলে লাশ হয়ে ফিরবে, কখনো ভাবিনি। আমার দুই নাতির এখন কী হবে? ছেলের সংসার এখন কিভাবে চলবে?’

জাকিরুলের চাচা আব্দুর রশিদ সরকার জানান, দেশের সুনামের জন্য বিদেশে গিয়ে নিহত হয়েছে তার ভাতিজা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার দাবি, তিনি যেন জাকিরুলের স্ত্রীর চাকরির একটা ব্যবস্থা করে দেন। এতে এ দম্পতির দুই ছেলে পড়াশুনার সুযোগটা পাবে।

স্থানীয় থানা সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় জাকিরুলের লাশ তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর বিদ্রোহীদের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। এই তিনজনের একজন জাকিরুল (আর্টিলারি নেত্রকোনা)। এ ঘটনায় নিহত বাকি দুই জন হলেন- সার্জেন্ট আলতাফ (ইএমই দিনাজপুর) ও সৈনিক মনোয়ার (ইস্ট বেঙ্গল বরিশাল)।