আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হকার নিয়ন্ত্রণকারীদের তালিকা দেননি মেয়র আরিফ

হকারদের দখলে সিলেটের ফুটপাতসিলেট নগরীর হকারদের নিয়ন্ত্রণকারীদের তথ্য দিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই আদেশের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই তালিকা জমা দেননি মেয়র আরিফ। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে আদালতকে অবহিতও করেননি তিনি। পুলিশ সহযোগিতা না করায় তিনি তালিকা করতে পারেননি বলে জানান মেয়র। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হকার উচ্ছেদের অভিযান চালিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আহমদ এ বছরের ১৭ মে আদালতে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিলেট নগরীর ফুটপাত দখল নিয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মে শুনানি শেষে সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো জনস্বার্থে একটি আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে সাত দিনের মধ্যে সিলেট নগরীর বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার নেপথ্যে থাকা নিয়ন্ত্রণকারীদের নাম ও ঠিকানা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।
প্রথম দফায় মেয়র ব্যর্থ হলে তার পক্ষে অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন অবৈধ দখলদারদের তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে সময় চেয়ে আবেদন করেন ৮ জুন। আদালত আরও একমাসের সময় দিয়ে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ওই রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছিল, সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণ, বার সমিতি ভবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় আদালতের কর্মচারী, বিচারপ্রার্থী জনগণ ও আইনজীবীদের স্বাভাবিক যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানেও একই চিত্র উল্লেখ করে আদালত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমন জনস্বার্থবিরোধী অবস্থা বিরাজ করলেও পুলিশ, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের এ বিষয়ে নির্বিকার থাকার কারণ বোধগম্য নয়। এ পরিস্থিতিতে ফুটপাতের অবৈধ ও বেআইনি দখলদারিত্বের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয়ের প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেন আদালত।
আদালতের দ্বিতীয় দফায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও ওই তালিকা আদালতে দাখিল করেননি মেয়র। ওই তালিকা তৈরির আদেশে আদালত সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সহায়তা করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে এখন মেয়র ও ওসি পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিলেট নগরীতে হকারদের নিয়ন্ত্রণকারী কারা, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার ওসির জানার কথা। কথা ছিল, তিনি আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।’ নগরবাসীর সুবিধার জন্য পুলিশের সহযোগিতায় বেশ কয়েকবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মেয়র শহর থেকে হকার উচ্ছেদের অভিযান চালান। এসময় পুলিশের সাহায্য চাওয়া হলে আমরা তা দিয়েছি। মেয়রকে হকারদের নিয়ন্ত্রণকারীদের তালিকা তৈরির সময় আমরা যেন সহযোগিতা করি— আদালত এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তালিকা তৈরি করে আদালতে দাখিলের কথা ছিল মেয়রেরই।’
আরও পড়ুন-
পতাকার বদলে বিছানার চাদরে মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার!
‘মিলে ধানও নাই, চালও নাই, লাইসেন্স নবায়ন কইরা কিতা অইবো’