অসহনীয় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ সিরাজগঞ্জবাসী

লোডশেডিং

অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সিরাজগঞ্জ শহরের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে আরেক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে রেশনিং পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বণ্টনেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এজন্য দায়ী করছেন জেলার নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বা সাবেক পিডিবির আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরের ২১টি বিদ্যুৎ সঞ্চালন অঞ্চল বা ফিডারের মধ্যে গোশালা-ফজলুল হক রোডে শহরের মিরপুর ফিডারটি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। শহরের অন্য এলাকায় যেখানে সরকারি অফিস-আদালত এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বসবাস, সেসব স্থানে বিদ্যুতের ফিডারে নামেমাত্র লোডশেডিং দেওয়া হয়। আবার ফোন করলেই সেখান থেকে লোডশেডিং তুলে নিয়ে অন্য ফিডারের ওপর চাপ বাড়ানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, গত কয়েক মাস থেকে এভাবেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক। চলতি বছর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে নেসকো কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর সংস্থাটির অধীনে থাকা জেলা শহরে দুই-একটি ফিডার বাদে প্রায় সবগুলোতেই লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে যেমন জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। সেই সাথে শহরে ছিঁচকে চোরের উপদ্রবও বেড়ে গেছে।

জেলা শহরের গোশালা ফজলুল হক রোডের দোকান মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, আরেক ঘণ্টা থাকে না। গত বছর এমন সমস্যা ছিল না। গত দুই-তিন মাস থেকে এ সমস্যা চলছে। ঠিকমত কাঠ চেরাই ও প্রোডাকশন না হওয়ায় কর্মচারীদের মজুরি দেওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।’

গোশালা রোডের বাসিন্দা মিল্টন কুমার সাহা বলেন, ‘বিদ্যুৎ কখন থাকে সেটা জানি না। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ইবি রোডের মমতাজ সিনেমা হলের সামনে বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন কর্মচারীকে পেয়ে লাঞ্ছিত করেছে এলাকাবাসী।’

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জ শহরের নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বা সাবেক পিডিবির আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘জেলা শহরে মোট ২১টি ফিডার ও তিনটি সাবস্টেশন আছে। সব ফিডারেই রেশনিং পদ্ধতিতে লোডশেডিং করা হয়। জাতীয়ভাবে বিভাজন করে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের জন্য ২৮ শতাংশ এবং পল্লী বিদ্যুতের জন্য ৭২ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হলেও বুধবার ছিল ১২ মেগাওয়াট। ১৫ মেগাওয়াট দিয়েই যেখানে সম্ভব না, সেখানে ১২ মেগাওয়াট সরবরাহ পেলে হবে কিভাবে।’

লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘শহরের যেখানে সরকারি অফিস আদালত ও হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে এমন  দুটি ফিডার বাদে বাকি ১৯টি ফিডারেই রেশনিং পদ্ধতিতে লোডশেডিং করা হয়। যাদের ফিডারে লোডশেডিং করা হয়, সেখানকার গ্রাহকরা মনে করেন যে শুধু তাদের ফিডারেই লোডশেডিং করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাটা আসলে তেমন নয়। যেভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাব, তা দিয়েই তো আমাকে ব্যবস্থা করতে হবে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের এক নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শহরে ছিঁচকে চোর ও মাদকসেবীদের উপদ্রব বেড়েছে।’