বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বরগুনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

তলিয়ে যাওয়া বিদ্যালয় (ছবি- প্রতিনিধি)

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বরগুনা জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় এসব গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বরগুনা সদর, বেতাগী, আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে অনেকের বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া পাথরঘাটা উপজেলায় টর্নেডো’তে অর্ধ-শতাধিক বসতবাড়ি ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার প্রধান তিন নদী বুড়িশ্বর, বিষখালী ও বলেশ্বরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বরগুনা সদর, বেতাগী, আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শনিবার ভোরে আকস্মিক টর্নেডোতে পাথরঘাটার কাঠালতলী ইউনিয়নের কালিবাড়ি ও কিরনপুর গ্রামে প্রায় ৪০টি বসতঘর ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরের চাল ভেঙে পড়ায় রেনু (৪৮) নামে এক গৃহবধূ মারাত্মক আহত হয়েছেন।

ধসে পড়া বসতঘর (ছবি- প্রতিনিধি)

উপজেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, বেড়িবাঁধ ভাঙায় ও জোয়ারের কারণে সদর উপজেলার বদরখালী, গুলিশাখালী, গৌরিচন্না ইউনিয়নের বিষখালী নদীর তীরের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঢলুয়া ইউনিয়নের মাছের খাল, ডালভাঙা, মোল্লার হোড়া, গোলবুনিয়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একই কারণে বেতাগী উপজেলার পৌরসভার উত্তর বেতাগী, দক্ষিণ বেতাগী, খাড়া কান্দা, হিন্দু পাড়া, সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী, কেওয়াবুনিয়া, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, হোসনাবাদের চরছোপখালী, জলিশা, মোকামিয়ার চরখালী, লঞ্চঘাট, বুড়ামজুমদারের গ্রার্মাদ্দন, বদনীখালীর আবাসন প্রকল্প, ধোপাবাড়ি গ্রাম, সরিষামুড়ির গাবতলী, আলীয়াবাদ, নাপিত খালী, বেতমোড় বেড়িবাঁধ এলাকা, মোকামিয়ার লঞ্চঘাট সংলগ্ন রাস্তা, চড়খালির মূল্যার খালের স্লুইজ, চর ছোপখালী ও বিবিচিনির ফুলতলা, দেশান্তরকাঠী, গড়িয়াবুনিয়া প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে চুলায় রান্নার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলার জ্বিনতলা, আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী, পালের বালিয়াতলী, চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী এবং তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।

আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের সময় তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর, পুকুর, মাঠ, কৃষিজমি, বিদ্যালয়।

বালিয়াতলী গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। একই গ্রামের জাকারিয়া জানান, বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের মাছের ঘের। একইসঙ্গে গবাদিপশুর খাবার নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে (ছবি- প্রতিনিধি)

বালিয়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, জোয়ারের সময় বুক সমান পানি ভেঙে তাদের বিদ্যালয় যেতে হয়। এসময় পড়ে গেলে বই-খাতা, জামা-কাপড় সব ভিজে যায়।

কৃষকদের অনেকে জানান, তাদের আমনের ক্ষেত তলিয়ে আছে। অনেক মাছ চাষি জানান, তাদের ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অনেক কৃষকের আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। জোয়ার ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে।

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙার খবর পেয়েছি। এ নিয়ে জরুরি সভা করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।’ ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।