জেলা কৃষি আবহওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। যা কখনও কখনও ৪০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়েছে।
সদর উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক নজরুল জানান, তিনি বর্গা জমি আবাদ করেন। বন্যায় একবার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আবার টাকা ধার করে ধানের চারা রোপণ করেছেন। এখন প্রতিটি ধান গাছের শীষ আসার মুহূর্তে বাতাসে পুরো ক্ষেতের ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। আসছে মৌসুমে পরিবার-পরিজন নিয়ে কী খেয়ে বাঁচবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।
এদিকে বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় জেলার রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও চিলমারী উপজেলাতেও আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর, নাওডাঙ্গা ও ফুলবাড়ী ইউনিয়নসহ সবকটি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত হেক্টর জমির ফসল মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বন্যার আঘাতের পর আবারও বাতাসে ফসলের এমন অবস্থায় কৃষকরা দারুন হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
একই ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লিয়াকত আলী জানান, ‘বানে খাইলে একবার, ঝড়ে খাইল আর একবার। এলা হামরা কী খায়া থাকমো! আল্লায় জানে এবার কপালত কী আছে!’
একই উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সালাম মিয়া, সংকর পাল, নূর আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন জানান, যেভাবে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে গেছে তাতে করে তারা ফসল বাড়িতে ওঠাতে পারবেন না। এসব ধানগাছ কেটে গরু ছাগলদের খাওয়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, গত রাত থেকে চলমান ঝড়ো হওয়া ও বৃষ্টিতে উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে বাতাস চলমান থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে রাজারহাট উপজেলাতেও ঝড়ো বাতাসে আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেক জমির আমন ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এসব ধানগাছ পানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। একই অবস্থার খবর পাওয়া গেছে জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলাতেও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মকবুল হোসেন জানান, বাতাসের কারণে অনেক জমির আমন ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। আমি নিজে রাজারহাট উপজেলায় পরিদর্শন করে এসেছি।
জেলায় কী পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার এখনও হিসাব নেওয়া সম্ভব হয়নি জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনও পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ অবস্থায় করণীয় কী, জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি তারা যেন কয়েকটি ধান গাছ একত্রে করে কলা গাছের ছোতর কিংবা খড় দিয়ে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখে। তাতে ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে না থাকলে তেমন ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।