জিরো থেকে হিরো


কর বাহাদুর আব্দুর রশিদ (ছবি- প্রতিনিধি)আব্দুর রশিদ, বাড়ি ময়মনসিংহ। পারিবারিকভাবে তাদের মুদির ব্যবসা ছিল। ১৯৭৮ সালে পারিবারের সেই ব্যবসা থেকে তিনি বের হয়ে যান। হাতে মূলধন ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। স্বল্প পরিমাণে সেই টাকা নিয়েই তিনি বেকারির ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন কারখানা ঘুরে বেকারির সামগ্রী সংগ্রহ করে দোকানে দোকানে সেগুলো সরবরাহ করতেন। এভাবে কাজ করতে করতে এক সময় বেকারি আর কনফেকশনারির সামগ্রী সম্পর্কে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হয় তার। ব্যবসা শুরুর ১২ বছরের মাথায় ১৯৯০ সালে ময়মনসিংহের চরপাড়ার পৈত্রিক জমিতে ছোট পরিসরে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। কারিগরদের সঙ্গে মিলে নিজে তৈরি করতেন পাউরুটি, বনরুটি, টোস্ট, বিস্কুট ও পেস্ট্রি। সেগুলো পাঠাতেন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন দোকানে। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসার প্রসার।কঠোর পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে সেই আব্দুর রশিদ প্রতিষ্ঠা পান। নিজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত করও দিতেন। আর তার এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ময়মনসিংহ থেকে শ্রেষ্ঠ করদাতা হিসেবে এবছর তিনি জিতে নিয়েছেন কর বাহাদুর খেতাব।

আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের ১০ সদস্য নিয়মিত আয়কর দিয়ে থাকেন। আয়কর প্রদানে ধারাবাহিক অবদানের জন্য আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারকে ২০১৬-২০১৭ করবছরে জেলার কর বাহাদুর পরিবার হিসেবে নির্বাচন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির এই সম্মাননা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই সম্মান মানুষকে আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহী করবে বলে মনে করছে এই কর বাহাদুর পরিবার।
ময়মনসিংহের চরপাড়ার মরহুম আলহাজ মোসলেম উদ্দিনের বড় সন্তান আব্দুর রশিদ (৬৩) এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ছাত্র জীবনেই পারিবারিক ব্যবসায় বাবাকে সহায়তা করতেন তিনি। ১৯৭০ সালে বিয়ে করেন জ্যোৎস্না আরা বেগমকে। ১৯৭৮ সালে পরিবারের ব্যবসা থেকে বের হয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার কনফেকশনারি অ্যান্ড বেকারির ব্যবসা। বৃদ্ধি পেতে থাকে শো’রুমের সংখ্যা।
কর বাহাদুর সম্মাননা গ্রহণ করছেন আব্দুর রশিদ (ছবি- প্রতিনিধি)আব্দুর রশিদ ও জ্যোৎস্না দম্পতির ছয় সন্তান। সন্তানরা সবাই লেখাপড়া শেষ করে বাবার ব্যবসায় সহায়তা করেন। তার সন্তানরা হলেন, আসাদুজ্জামান নূর জসিম, মাসুদ পারভেজ শান্ত, আসাদুজ্জামান রনি, রাশিদা ইয়াসমিন রুমা, ফরিদা ইয়াসমিন লিজা ও ফারহানা ইয়াসমিন মনি। বড় ছেলে জসিম ‘রুমা মোবাইল শপের’ আর অন্যরা ‘রুমা কনফেকশনারি অ্যান্ড বেকারি’র বিভিন্ন শো’রুমের দেখভাল করেন। চরপাড়া মোড় এবং বিসিকের কারখানা আব্দুর রশিদ নিজেই দেখাশোনা করেন।
কর বাহাদুর আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে যে কোনও কাজ করলে অবশ্যই সফলতার মুখ দেখা যায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিজের সন্তানের মতো করে ভালোবাসলে সফলতা আসবেই।’ এই ব্যবসায়িক সফলতা এবং পরিবারের কর বাহাদুর খেতাব অর্জনের ক্ষেত্রে সহধর্মিনীর অবদান সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি এলাকাবাসী এবং ব্যবসায়ীদের আয়কর দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়ে আসছেন। আয়কর দেওয়ার মাধ্যমেই প্রতিটি মানুষ দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।
ময়মনসিংহ কর অঞ্চলের কর কমিশনার জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ জানান, আব্দুর রশিদের পরিবার আয়কর দিয়ে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। এ বছর থেকে কর বাহাদুর পরিবার খেতাব প্রবর্তন করায় মানুষ আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও আগ্রহী হবে।