এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ শিল্প-কলকারখানা ও তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি করা হয় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। এই বন্দর দিয়ে বছরে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। বন্দর থেকে প্রতিবছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে সরকার। ইতোমধ্যে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অথচ এখন এই পথটি যান চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটির মাঝামাঝি অবস্থিত ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের ওপরকার সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর হলেও বেনাপোলে রয়েছে নানা সংকট। বন্দরে পণ্য রাখার জায়গায় তীব্র সংকট। ভারতের অংশে ৫-৭ হাজার গাড়ি ২০-২৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে পণ্য খালাসের জন্য। বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর যন্ত্র বিকল। ফলে বর্তমানে দিনে ৩-৪শ’য়ের বেশি গাড়ির পণ্য আনলোড করা যাচ্ছে না। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।’
সংবাদ সম্মেলনে ভারত থেকে আমদানি করা যানবাহন রাখার জন্য নতুন ইয়ার্ড নির্মাণের দাবি জানানো হয়। এক্ষেত্রে নোম্যান্সল্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ওপেন ইয়ার্ড/শেড নির্মাণের দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত ভারতের যশোর রোডের দুই ধারের শতবর্ষী পুরনো গাছ কেটে আমদানি-রফতানির সুবিধার্থে মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করেছে ভারত সরকার। সেই আদলে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশের শতবর্ষী গাছ কেটে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে। বন্দরের গুদামে পণ্যের ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার মেট্রিক টনের। সেখানে পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে এক লাখ টনের মতো। আরও ২০টি নতুন গুদাম নির্মাণ না করলে বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বন্দরে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করা, প্রশাসনিক ভবনসহ ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ, বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য দশটি ক্রেন ও দশটি ফর্কলিফটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের দাবিও জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এই বন্দরের কাছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন পাসপোর্টধারী পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার যাত্রী দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করছে। এ জন্য চেকপোস্ট সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সেখানে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট খোলা থাকে মাত্র আট ঘণ্টা।
এছাড়া পণ্যের নমুনা নিরীক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বেনাপোল কাস্টম হাউসে বিএসটিআইয়ের একটি শাখা অফিস স্থাপনেরও দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, সহসভাপতি মো. নুরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি শামসুর রহমান, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান, ব্যবসায়ী নেতা মহসিন মিলন ও জামাল হোসেন প্রমুখ।