মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর দিতে চান মোস্তফা

মোহাম্মদ মোস্তফামৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর দিতে চান ‘কর বাহাদুর’ মোহাম্মদ মোস্তফা। ৫৭ বছর ধরে নিয়মিত কর দেওয়ায় কক্সবাজার জেলা থেকে ‘কর বাহাদুর পরিবার’ এর খেতাব জিতেছেন তিনি। ঠিকাদারি ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মোস্তফা। এখন নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে তার। ৭৭ বছরে বয়সে এই খেতাব জেতায় তিনি খুবই আনন্দিত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে তার পক্ষে কথা বলেছেন তার ছেলে শাহরিয়ার হুদা।

১৯৪১ সালের ৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমাকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তফা। গত ৫০ বছর ধরে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া বসবাস করেছেন তিনি। পরিবারে তার স্ত্রী, চার ছেলে ও ছয় মেয়ে রয়েছে।

বাবার বরাত দিয়ে সেজো ছেলে শাহরিয়ার হুদা বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৬০ সাল থেকে ঠিকাদারির ব্যবসা দিয়ে শুরু করেন। তিনি প্রথম কাজ পেয়েছিলেন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্পে। সেই থেকেই তিনি কর দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘বাবা এখন খুবই অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন। তিনি আমাদেরকে বলেছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজে কর কর দেবেন। একইভাবে আমাদেরকেও নিয়মিত এবং অন্যদের কর দিতে উৎসাহিত করতে বলেছেন। বর্তমানে আমি, আমার দুই ভাই শাহ নেওয়াজ সিদ্দিকী, শাহাজাহান সিদ্দিকী এবং মা জান্নাতুল কমর কর দিচ্ছি। আমার পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ডাক্তার, পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রবাসী রয়েছেন। এ কারণে আমরা বুঝি কেন কর দিতে হয়।’

কর বাহাদুর পরিবারের এই সদস্য বলেন, ‘আমাদের বহুমুখী ব্যবসা রয়েছে। হোটেল-মোটেলের ব্যবসা থেকে শুরু করে রাইস ও বরফ মিল, অ্যাগ্রো প্রসেসিং ও স্টিল অ্যান্ড সিমেন্ট করপোরেশনসহ নানা ব্যবসা রয়েছে আমাদের। এলাকায় বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে হেফজ খানা, এতিম খানা এবং নুরানী মাদ্রাসা। কারণ ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন আমার বাবা।’

Cox-MD Mostafa (1)

শাহরিয়ার বলেন, ‘কর দেওয়ার কোনও বিকল্প নেই। তাই, আমরা পরিচিত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে কর দিতে উৎসাহ দেই। কর দেওয়ার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। তাদেরকে বুঝিয়ে বলি, কেন কর দিতে হয়।’

কক্সবাজার রাজস্ব অফিসের সহকারী কর কমিশনার জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘এই বছরই প্রথম কর বাহাদুর পরিবার নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ মোস্তফা। ১৯৯৫-৯৬ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তার দেওয়া করের পরিমাণ ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩১ টাকা। তিনিসহ তার পরিবারের পাঁচ জন দীর্ঘদিন নিয়মিত কর দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘কর বাহাদুর পরিবারের পাশাপাশি জেলায় আরও সাত জনকে করদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এরমধ্যে সর্বোচ্চ করদাতা তিন জন, দীর্ঘ সময় করদাতা দুই জন, নারী করদাতা একজন ও তরুণ করদাতা (৪০ বছর বয়সের নিচে) হিসেবে একজনকে নির্বাচিত করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি কর ক্যাম্প, স্পট অ্যাসেসমেন্ট, আয়কর মেলার আয়োজন করতে হয়। এছাড়াও ‘ইটিআইএম’র মাধ্যমেও কর পরিশোধ করা হয়। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে করদাতাদের উৎসাহিত করতে হয়।

আরও পড়ুন:
ছুটির দিনে ঢাকা লিট ফেস্টে জনস্রোত