তাজরীন ট্র্যাজেডির পাঁচ বছর: সেই স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় শ্রমিকদের

অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই তাজরীন ফ্যাশনস (ফাইল ছবি)আজ ২৪ নভেম্বর। দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ২০১২ সালের এই দিনে তোবা গ্রুপের পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনস-এর নিচ তলায় থাকা তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১৩ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরও তিন শতাধিক শ্রমিক।

পাঁচ বছর আগের এদিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরীন ফ্যাশনস –এ আগুন ছড়িয়ে পড়লে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়েন শত শত শ্রমিক। পরে অনেক শ্রমিক ছাদ থেকে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নেমে জীবন বাঁচান। অনেকে আবার প্রাণ বাঁচাতে ছাদ থেকে লাফ দেন। যারা ছাদে যেতে ব্যর্থ হন তাদের অনেকে জানালা দিয়ে লাফ দেন, অনেকে আবার জানলা দিয়ে বের হয়ে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নামেন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

সম্প্রতি তাজরিন ফ্যাশনস -এ গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির প্রধান ফটকটিতে তালা ঝুলছে। ভাঙা জানালার গ্লাসগুলো এখনও তাকিয়ে আছে সড়কের দিকে। এক সময়কার কর্মচঞ্চল ভবনটি এখন রূপ নিয়েছে ভূতুড়ে ভবনে। মূল ভবনটির চারপাশের শ্যাওলা ধরা দেওয়ালেই গজিয়ে উঠেছে ছোট ছোট গাছ।

তাজরীন ফ্যাশনস –এ আগুন লাগলে জানলা দিয়ে বের হয়ে ভবনটির পাইপ দিয়ে নিচে নেমে প্রাণ বাঁচান লিয়ন নামের এক শ্রমিক। নিজে বেঁচে গেলেও তিনি তার বাবা-মা ও ভাই-ভাবিকে হারান। লিয়ন জানান, এখন তিনি তার একমাত্র বোনের বাসায় থাকেন। মা-ভাইয়ের লাশ পেলেও বাবা ও ভাবির লাশ পাননি তিনি।

লিয়ন বলেন, ‘সেদিনের সেই ভয়াবহতা এখনও ভুলতে পারিনি। প্রতিটা মুহূর্তে বাবা-মার সেদিনের চিৎকার কানে বাজে, বাবা, আমাদের বাঁচা। এ যে কি যন্ত্রণা, তা বলে বুঝানো যায় না।’

বেঁচে যাওয়া পারভিন বলেন, ‘সহকর্মীদের বাঁচার আকুতি এখনও কানে ভেসে। বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে এখনও। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে ডাক্তারের কাছে গেছি। ডাক্তার বলেছে, যতদিন বেঁচে থাকব, সেদিনের স্মৃতি হয়ত আর ভুলতে পারব না।’

তাজরীন ফ্যাশনস –এ আগুন লাগলে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আহত হন জোসনা নামের এক শ্রমিক। পরে ছাদ থেকে লাফ দিলে তার পা ভেঙে যায়। তিনি বলেন, ‘এক সময় কর্মক্ষম ছিলাম। এখন পঙ্গু হয়ে গেছি। অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে গেছি। এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো ছিল।’

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিকলীগের সাভার-আশুলিয়া থানা কমিটি সভাপতি মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটু দেরিতে হলেও সরকার এবং পোশাকশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ নিহত ও আহত শ্রমিকদের অনুদান দিয়েছে। পঙ্গু শ্রমিকদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারি সহযোগিতা দরকার। এছাড়া আহত শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করাটাও জরুরি।’