লক্ষ্মীপুরকে মুক্ত করতে শহীদ হন ৩৫ মুক্তিযোদ্ধা

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিসৌধ (ছবি- অনলাইন থেকে নেওয়া)

লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে একাত্তরের ৯ মাসে ২৯ বার অভিযান চালান মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যে পাক-সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ১৭ বার সম্মুখ যুদ্ধ হয়। আর এসব যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন ৩৫ মুক্তিযোদ্ধা।

৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর। এর পেছনে লক্ষ্মীপুরের দামাল ছেলেদের সংগ্রাম ও ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে উপরের তথ্যগুলো দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বাবু কাজল কান্তি দাস।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সূত্র জানায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাসে রাজাকার-আল বদরদের সহায়তায় জেলার ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এসময় শত শত নারীরা ধর্ষণের শিকার হন। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আরও শত শত নারী-পুরুষ-শিশুকে। এই অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যা থেকে নিজ জেলাকে বাঁচতে হাতে অস্ত্র তুলে নেন লক্ষ্মীপুরের দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে পাক-সেনাদের সঙ্গে ১৭ বারের সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন সৈয়দ আবদুল আলীম বাসু, মুনছুর আহমদ, আবু ছায়েদ, আবুল খায়ের, নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, আতিক, মোস্তাফিজুর রহমান, আলী আহাম্মদসহ (ইপিআর) ৩৫ জন।

সূত্র আরও জানায়, ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী (প্রয়াত) এবং সুবেদার আবদুল মতিনের (প্রয়াত) নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে সদর উপজেলার দালাল বাজার, দক্ষিণ হামছাদী, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খালপাড়সহ বাগবাড়ীস্থ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে এ জেলাকে হানাদার মুক্ত করেন এবং প্রায় দেড় শতাধিক রাজাকারকে আটক ও তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। পরে এদিন প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়।

পাক হানাদার ও তাদের দেশীয় দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, টর্চারসেল, মাদাম ব্রিজ বধ্যভূমি, পিয়ারাপুর ব্রিজ, বাসু বাজার গণকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি।

সদর উপজেলার দালাল বাজারের শহীদ আলী আজমের ভাই শাহজাহান বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের মতো আরও অনেক পরিবারের লোকজনকে রাজাকার ও আল-বদররা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। এসব যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করতে হবে, এটা আমাদের দাবি।’

বাবু কাজল কান্তি দাস বলেন, ‘আমরা আশা করছি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগে সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করবে এ সরকার।’