‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ উপন্যাসের সেই জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের পথে

‘বউ ঠাকুরাণির হাট’ উপন্যাসের সেই জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের পথেরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র সুরমার স্মৃতিজড়িত মাগুরার শ্রীপুরের জমিদার বাড়িটি এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ। নতুন প্রজন্ম জানেও না এই ঐতিহাসিক বাড়িটির ইতিহাস। সচেতন এলাকাবাসী মনে করেন, সরকার উদ্যোগ নিলেই বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র।

স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও ইতিহাস গবেষকদের দেওয়া তথ্য মতে, পনেরশ' শতাব্দিতে নবাব আলী বর্দী খাঁর কাছ থেকে এ অঞ্চলের জমিদারি কিনে নেন সারদা রঞ্জন পাল। যশোরের প্রভাবশালী রাজা প্রতাপাদিত্য তার ছেলে উদয়াদিত্যের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীপুরের জমিদার সারদা রঞ্জন পালের কন্যা বিভা রানী পালের। প্রতাপাদিত্যের সহযোগিতায় সারদা রঞ্জন নির্মাণ করেন এই জমিদার বাড়ি। প্রতাপাদিত্য ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজা,আর সারদা রঞ্জন তার তুলনায় উদার মনের মানুষ। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়,এর প্রভাব পড়ে সারদার মেয়ে বিভা পালের সংসারে। পরবর্তীতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাহিনীকে উপজীব্য করে রচনা করেন ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ নামে একটি উপন্যাস, যা পাঠকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।মাগুরার শ্রীপুরের জমিদার বাড়ির সিন্দুক

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুরা জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রাচীন এ জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়ে গেছে। বাড়িটির সিংহদ্বার এবং কয়েকটি কক্ষের নিদর্শন এখনও স্পষ্ট। অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে একটি সিন্দুক। স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই এই স্থাপনাটিকে শুধু একটি জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই জানেন না।

শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক শিক্ষক বাংলা সাহিত্যের গবেষক ড. মাজেদা খাতুন বলেন, ‘বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসে উদায়াদিত্যের স্ত্রী সুরমাই মূলত এ জমিদার বাড়ির মেয়ে বিভা পাল। উপন্যাসেও বারবার বিভাকে বলা হয়েছে- শ্রীপুরের জমিদার বাড়ির কন্যা। ইতিহাসখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্য তার ছেলে উদায়াদিত্যকে শ্রীপুরের জমিদার সারদা রঞ্জনের মেয়ে সুরমার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে আমরা এ ইতিহাস তুলে ধরতে পারিনি। শেষ নিদর্শনটুকুও বিলীন হতে চলেছে।’

শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমরা শুনেছি, এটি একটি জমিদার বাড়ি। কিন্তু এর ইতিহাস এমনকি বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসে এখানকার উল্লেখ সম্পর্কে কিছুই জানি না।’মাগুরার শ্রীপুরের জমিদার বাড়ি

শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ হোসেন পল্টু বলেন, ‘এটি শুধু একটি জমিদার বাড়িই নয়, এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িত। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসের সুরমার  জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। উদায়াদিত্যও অবসর সময় কাটাতে স্ত্রীর সঙ্গে এখানে আসতেন বলে জানা যায়। এমন একটি স্থাপনা অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটি পর্যটন বিভাগের আওতায় এনে সংস্কার করা হলে নতুন প্রজন্ম অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে।’

মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘মাগুরার পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, এই জমিদার বাড়িটি নিয়েও কিছু করতে পারবো।’