জানা যায়, নওগাঁ সদর, মান্দা, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, বদলগাছী ও ধামুইরহাট উপজেলায় ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক এলাকায়। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ভাটার জন্য আবাদি জমির প্রথম ছয় ইঞ্চি থেকে একফুট পরিমাণ মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে উর্বরতা হারিয়ে জমি পরিণত হচ্ছে ঊষর ভূমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, ‘জমির টপ সয়েল ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ওপর জমির উর্বরতা নির্ভর করে। টপ সয়েল কাটার পর জমির আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ৫-৭ বছর সময় লাগে। টপ সয়েল না থাকলে মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।’
সুরমা ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার ম্যানেজার রিপন হোসেন বলেন, ‘আমরা জমির টপ সয়েল কাটতে চাই না। অনেকটা বাধ্য হয়েই কাটি।’ জমির উপরিভাগের মাটি নিলে জমির ক্ষতি হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা তো ক্ষতি হয়। কিন্তু নিরুপায় হয়ে জমির টপ সয়েল কাটতে হচ্ছে।’
জমির টপ সয়েল কেটে ইট তৈরির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা জমির মালিককে টপ সয়েল কাটার জন্য ন্যায্য মূল্য দিয়ে থাকি। এজন্য ট্রাক্টর প্রতি একশ’ টাকা দেওয়া হয়। আমরা ইট তৈরির জন্য যে শুধু জমির টপ সয়েল নেই তা নয়, দোআঁশ, এঁটেল ও বেলে মাটি দিয়েও ইট তৈরি করে থাকি।’
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুল হক বলেন, ‘ইটভাটা এলাকার অনেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়াও হাঁপানি, চোখ জ্বালা ও অ্যালার্জিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগ বেশি হচ্ছে।’
পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মুকুল হোসেন বলেন, ‘নওগাঁয় পরিবেশ অধিদফতরের কোনও অফিস নেই। বগুড়া অফিস থেকে আমরা মনিটরিং করে থাকি। তাছাড়া আমাদের লোকবলেরও অভাব রয়েছে। আমরা যদি অভিযোগ পাই, তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘যেসব ভাটার মালিক পরিবেশের বিধান মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া, জমির টপ সয়েল কেটে কেউ যেন ইট তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার করে পরিবেশ আইনে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও তিনি জানান।