চতুর্মুখী আক্রমণে শত্রুমুক্ত হয় পাবনা

স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ (ছবি- প্রতিনিধি)

১৪ ডিসেম্বর চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি। মনোবল ভেঙে গেলেও নতি স্বীকার করছিল না শত্রুসেনারা। শেষমেশ চতুর্মুখী আক্রমণে যান মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা। এতে কাজ হয়। দলে দলে পাবনা ছেড়ে পালাতে থাকে হানাদাররা।

পাবনার শত্রুমুক্ত হওয়ার ইতিহাস বলতে গিয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধারা এসব তথ্য জানান। তারা আরও জানান, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সৈন্য ছিল শত্রুশিবিরে। তাই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও পাকিস্তানি সেনাদের কোণঠাসা করতে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হয় তাদের।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, শত্রুমুক্ত ঘোষণার পর শহরজুড়ে মানুষের ঢল নামে। দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এসে সমবেত হতে থাকেন। মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও ১৮ ডিসেম্বরই মূলত পাবনার মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত আনন্দ উপলব্ধি করেন। এসময় হাজারো মানুষ কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গগনবিদারী আওয়াজ উঠে, ‘জয় বাংলা’। পরে পাবনা কালেক্টরেট ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়।
কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল, তখনও পাবনা শহরে চলছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা চারপাশ থেকে পাবনা শহরকে ঘিরে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। ওইদিন তারা পাবনা ছেড়ে দলে দলে পালাতে থাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী হিসেবে পাবনায় এপর্যন্ত ৪১টি গণকবর পাওয়া গেছে। জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ‘দুর্জয় পাবনা’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।