এদিকে, ঐতিহ্যবাহী এই ইনস্টিটিউট চত্বরের ৫শ গজ থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত এক ডজনেরও বেশি নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কোনও কোনোটি স্থাপিত হয়েছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে। আশপাশে এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কেন এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটের জমিতেই নতুন স্কুল গড়ে তুলতে হবে— সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিকর্মীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে। অবশ্যই বৈধভাবে রেলওয়ে কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েই সেটা করা হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আবার, এলাকাবাসীর দাবির কথা বারবার বলা হলেও এই মানববন্ধনে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কোনও নেতাকেই উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকাবাসীর নামে মূলত চেম্বার অব কমার্সের নেতারাই এই মানববন্ধন আয়োজন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার প্রবীণ একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও একই অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটের আশপাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে দেখা মিলবে বেশকিছু স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ১৯৪৫ সালে স্থাপিত নিজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে।
পিকে বিক্রম বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের আশাপাশে এত স্কুল থাকার পরও কেন সেখানেই নতুন স্কুল স্থাপন করতে হবে, সেটা ভেবে দেখার বিষয়।’ আদৌ ওই স্কুলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেই প্রশ্নই তিনি উদ্দেশে ছুঁড়ে দেন।
লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্র নাথ বলেন, ‘মানববন্ধন আয়োজকদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তবে এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট হেরিটেজ চালুর দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে, থাকবে।’
লালমনিরহাট শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কিছুর জন্য আন্দোলন হয় না। লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব না।’
এদিকে, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী এই ইনস্টিটিউট সংরক্ষণের জন্য বিবৃতি দিয়েছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক, নাট্যচিন্তক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ লিখেছেন, ‘আমি চাই, শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট সকল সীমাব্ধতা কাটিয়ে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসাবে পরিণত হয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চার পীঠোস্থান হয়ে উঠুক। সেই সঙ্গে আশা করি, প্রজাতন্ত্রের শুভদৃষ্টিসম্পন্ন কর্তারা এই ঐতিহ্যকে যত দ্রুতসম্ভব পুনঃসংস্কার করে লালমনিরহাট জেলায় জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত প্রজন্ম তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।’
ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বিশ্ব সভাপতি, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে কয়েকটি শতবর্ষী নাটমঞ্চের মধ্যে লালমনিরহাটের এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট অন্যতম। কিন্তু সম্প্রতি এ ইনস্টিটিউটের জীর্ণ স্থাপনা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে ভূমি দখলের অপচেষ্টা হচ্ছে জেনে আমরা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হয়েছি। অবিলম্বে এ ধরনের কার্যকলাপ প্রতিহত করে এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি সংস্কার করে এখানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি। যেকোনও মূল্যেই লালমনিরহাটের এই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।’