স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ইউএনও রাসেদের এই শিবালয়প্রীতির পেছনে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। উপজেলার চরাঞ্চলে গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে; অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় পদ্মা ও যমুনায় অবাধে চলছে অবৈধ বালু ব্যবসাও। এছাড়া, ইউএনও রাসেদ একইসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সবগুলো বিষয়েই নির্বাহী কর্মকর্তার বিপুল অর্থযোগ দেখছে স্থানীয় সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইউএনও কামাল মোহাম্মদ রাসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বদলির আদেশ হয়েছে আর যাচ্ছি না কেন–এটা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আমি এর বাইরে কিছু বলতে রাজি নই।’
এ বিষয়ে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পোস্টিং অ্যান্ড ডেপুটেশন’ (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘আমরা তাদের আদেশ করেছি। যদি তারা নির্ধারিত সময়ে না যান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে কামাল মোহাম্মদ রাসেদকে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক করা হয়। ওই সময়ও তিনি তদবির করে এই আদেশ স্থগিত করান।
শিবালয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, ‘ইতোপূর্বে ইউএনও রাসেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও এসেছে।’
শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ইউএনওর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানসহ আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু বদলির আদেশ জারি হলেও তিনি কোন খুঁটির জোরে এখনও এখানে আছেন, এটা বোধগম্য নয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ইউএনও রাসেদ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
রেজাউর রহমান খান আরও বলেন, ‘শিবালয় উপজেলার চরাঞ্চলে কয়েক কোটি টাকার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজের শুরুর দিকে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, শিবালয় উপজেলায় ৩০০ একর জমির ওপর একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে। সেই জমি অধিগ্রহণের সময় অনৈতিক লেনদেন হতে পারে। এছাড়া, পদ্মা-যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু ব্যবসার মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যও রয়েছে। শিবালয় উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় ভূমি সংক্রান্ত খারিজের কাজও করছেন ইউএনও রাসেদ। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ইউএনও টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে মধ্যস্থ্যতাকারী হিসেবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’
কয়েক দফা বদলির আদেশের পরও নতুন কর্মস্থলে যাচ্ছেন না এই প্রশ্ন করলে শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল মোহাম্মদ রাসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বদলির আদেশ হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষই আমাকে রেখেছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষই ভালো জানে।’