মরুতে চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী

বক্তব্য রাখছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী (ছবি- প্রতিনিধি)

দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের কঠিন পরিস্থিতিতেও ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যদি তা হয়, তবে সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। দেশ মরুভূমি হয়ে গেলে মরুতে চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে তাদের।’

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা, ২০১৬-১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পাঁচ দিনের এ কর্মশালা শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার।

বন্যা, খরাসহ যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহনশীল ধানের জাত ও জুতসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে উত্তরাঞ্চলে পানি-নির্ভর চাষাবাদ ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। বোরো চাষে পানি খরচ হয় বেশি। তাই বেশি পানি খরচ করে আর কতদিন বোরো চাষ করবো, চিন্তা করতে হবে। আমি আগে বলতাম, লবণের বাটিতে ধান চাই। আর এখন বলছি, মরুভূমিতেও ধান চাই। অর্থাৎ সবচেয়ে কম পানিতে বেশি ফলন দেয়, এমন ধানের জাত আমরা চাই।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন কী, বুঝতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কম পানিতে কিভাবে বেশি ধান উৎপাদন করা যায়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। পানির অর্থনীতি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আগে শুধু বোরো ধানের জাত উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। বর্তমানে আউশ ও আমনের ওপর জোর দিচ্ছি। বোরো কিন্তু ইনকিউবেটর বেবি। বোরো উৎপাদনে পানি খরচও হয় বেশি।’

ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘গত মৌসুমে শুধু বন্যার পানিই যে ফসল উৎপাদনে ক্ষতি করেছে তা নয়, ব্লাস্ট রোগেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যেখানে ৫০ মণ ধান হতো, সেখানে তা ৪০ মণে নেমে এসেছে। সব জায়গায় এ ক্ষতি হয়নি, তবে কিছু জায়গায় হয়েছে। এতে মোট উৎপাদন কিছুটা হলেও কমেছে। তাই ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। এ নিয়ে আমি কোনও অজুহাত শুনতে চাই না।’

ব্রি উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি কেন মাঠ পর্যায়ে সমাদৃত হচ্ছে না, সেদিকেও বিজ্ঞানীদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানানা তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত ৯ বছরে ৪টি হাইব্রিডসহ আউশ, আমন ও বোরো ধানের মোট ৪০টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। শুধু গত বছরেই প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ১০টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধানের জাত উন্নয়নে আমরা আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। বর্তমানে আমাদের জিংক ব্যাংকে ৯৫০ ধরনের বিদেশি জার্মপ্লাজম সংরক্ষিত আছে। চীন থেকে পাওয়া ৪১টি উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের কৌলিক সারির গবেষণা চলছে। এছাড়া, খরা সহনশীল ৪৫২টি কৌলিক সারি নিয়ে ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় গবেষণা চলমান রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন– ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবির ইকরামুল হক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন। এতে বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনার নানা তথ্য তুলে ধরে ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৬-১৭’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি'র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী ড. তমাল লতা আদিত্য। ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।