ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিপ্লব দেব!

২০১৬ সালের অক্টোবরে কচুয়ায় এক অনুষ্ঠানে বিপ্লব দেব (ছবি- প্রতিনিধি) ২

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিপ্লব কুমার দেব। মুক্তিযুদ্ধের আগে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর (পূর্ব) ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামে বাস করতেন বিপ্লব কুমার দেবের বাবা হিরুধন দেব ও মা মিনা রানী দেব। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ত্রিপুরা চলে যান।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে বিজেপি ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসন পায়। বিপ্লব কুমার দেব নিজেও একটি আসনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এতে ত্রিপুরায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি।

বিপ্লব দেবের চাচা প্রাণধন দেব চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা কৃষকলীগের সেক্রেটারি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হিরুধন দেব ও মিনা রানী দেবের এক ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। একমাত্র ছেলেটাই বিপ্লব কুমার দেব। হিরুধন দেব ও মিনা রানী দেব যখন ত্রিপুরা চলে যান তখনও জন্ম হয়নি বিপ্লব কুমার দেবের। তবে ত্রিপুরা যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তার জন্ম হয়।

প্রাণধন দেব জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা গিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন হিরুধন দেব ও মিনা রানী দেব। তবে আত্মীয়-স্বজন্দের বেশিরভাগই কচুয়ায় থাকায় এখানকার সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়ে যায়।

প্রাণধন দেব বলেন, ‘আমার ভাতিজা আজ ভারতের একটা অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ পদে বসতে যাচ্ছে। আমরা সবার কাছে আশীর্বাদপ্রার্থী। প্রার্থনা করি, সে (বিপ্লব দেব) অল্প বয়সে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা যেন রাখতে পারে।’

২০১৬ সালের অক্টোবরে কচুয়ায় এক অনুষ্ঠানে বিপ্লব দেব (ছবি- প্রতিনিধি)

জানা গেছে, বিপ্লব দেব ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে ৭ জানুয়ারি। তিনি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিপ্লব দেব ১৫ বছর দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি ব্যায়ামাগারের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। এবার ত্রিপুরার বনমালিপুর আসন থেকে লড়েছেন বিপ্লব।

ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিপ্লব দেব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা দলটির সবচেয়ে কম বয়সী রাজ্য সভাপতি। এই যুবনেতা মাত্র দুই বছরের মাথায় ২৫ বছরের বাম শাসনের পতন ঘটিয়ে ত্রিপুরায় বিজেপিকে একক সংখ্যাগরিষ্টতা এনে দিয়েছেন। অন্য অনেকের নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় থাকলেও সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বিপ্লব দেব। তার হাতেই ত্রিপুরার ভার সঁপে দেওয়া হতে পারে।

বিপ্লব দেবের জয়ের খবর পেয়ে শনিবার কচুয়ায় মিষ্টি বিতরণ করেন তার আত্মীয়স্বজন ও অনুরাগীরা। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুর-১ কচুয়ার সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘আমার এলাকার সন্তান ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভায় জয়ী হওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।’

গতবছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে বিজেপির প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে যোগদান করেন বিপ্লব দেব। এরপর তিনি কচুয়ায় আসেন। ওইদিন কচুয়া প্রেসক্লাবও তাকে সংবর্ধনা দেয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র অফিসার নীতি রানী দেব। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ভূমিতে এসে যে সম্মান পেয়েছি তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’