প্রতিষ্ঠিত আলোকচিত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল প্রিয়কের

নিহত প্রিয়কগাজীপুরের ফারুক হোসেন প্রিয়ক ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। ছবি তোলাই ছিল তার নেশা। দেশে বিদেশে যেখানেই যেতেন সঙ্গে থাকত ক্যামেরা। শখ ছিল প্রতিষ্ঠিত আলোকচিত্রী হওয়ার। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সে স্বপ্ন তার অপূর্ণই রয়ে গেলো। গত সোমবার নেপালে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন প্রিয়ক ও তার ৩ বছর বয়সী মেয়ে প্রিয়ংময়ী তামররা। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি। তাদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ছিলেন প্রিয়কের ভাই মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা। তারাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বামী ও মেয়ের করুণ পরিণতির কথা এখনও জানেন না এ্যানি।

বৃহস্পতিবার প্রিয়কের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে গেলে এসব কথা জানান তার শ্বশুর সালাউদ্দিন। তিনি জানান, এ্যানিকে এখনও তার স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।

প্রিয়ক-এ্যানি দম্পতির একমাত্র মেয়ে তামাররা। বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে শিশুটিতিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রিয়ক ভারত ভ্রমণ করে এসেছে। এবার সপরিবারে নেপাল গিয়েছিল সর্বোচ্চ পর্বত দেখার জন্য। নেপাল যাওয়ার একদিন আগে রবিবার তারা আমাদের বাড়িতে এসে দেখা করে দোয়া চেয়ে বিদায় নিয়েছিল।’ তিনি জানান, তার বড় মেয়ে এ্যানির সঙ্গ ২০১১ সালে প্রিয়কের বিয়ে হয়।  

প্রিয়কের ফুফাতো ভাই তাজুল ইসলাম জানান, প্রিয়ক তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা শরাফত আলী মারা গেছেন ৫ বছর আগে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন প্রিয়ক। কিন্তু তার শখ ছিল আলোকচিত্রী হওয়া। এ কাজই ছিল তার নেশা।

নেপালে চিকিৎসাধীন প্রিয়কের স্ত্রী এ্যানিতাজুল ইসলাম আরও বলেন, প্রিয়ক ছবি তুলে ব্যক্তিজীবনে অনেক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি Bengal Image National Photo Contest 2016-তে পদক জিতে নিয়েছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল আন্তর্জাতিক মানের একজন আলোকচিত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।

প্রিয়কের শ্বশুর মো. সালাউদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর আগে প্রিয়কের বাবা মারা যান। এখন সন্তানসহ প্রিয়কও চলে গেল পরপারে। প্রিয়কের বন্ধু ব্যবসায়ী লেলিন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর প্রিয়ক তার মাকে অনেকদিনের জন্য বাড়িতে একা রেখে কোথাও যেত না। বিয়ের পর মা ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব আনন্দেই কেটে যাচ্ছিল তাদের মা-ছেলের পরিবার। সোমবার বিমান বিধ্বস্তের খবর শোনার থেকে বারবার মুর্ছা যাচ্ছে প্রিয়কের মা। একরকম বাকরুদ্ধ তিনি।