নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারানো শাহীন ব্যাপারীর দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৬ মার্চ) রাত সোয়া ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদি কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টায় শাহীন ব্যাপারীর মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্ব পাড়া এলাকায় তার ভগ্নিপতি আব্দুল আজিজ মাদবরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। শাহীনের মা জাহানারা বেগম, স্ত্রী রীমা আক্তার ও মেয়ে সূচনাসহ আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় শাহীন ব্যাপারীর লাশ দেখতে কয়েকশ’ লোক বাড়িতে ভিড় জমায়।
পড়ে জানাজার উদ্দেশে লাশ নিয়ে আসা হয় মিজমিজি পাইনাদি কবরস্থান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে। সেখানে রাত ১১টার দিকে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সহস্রাধিক লোক অংশ নেয়। মুজিববাগ মসজিদের ইমাম আশিকুল ইসলাম শাহীনের জানাজা পড়ান। পরে তাকে মিজমিজির পাইনাদির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শাহীন ব্যাপারীর ভাই শাহাদাৎ হোসেন চঞ্চল ব্যাপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘নেপাল থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর আমার ভাই ভালো ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা বলতেন। কিন্তু গতকাল অস্ত্রপচারের পর থেকেই আমার ভাই পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। অপারেশনের পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ডাক্তার তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছুই বলেনি। আজ বিকাল ৩টার দিকে ফোন করে আমাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের জানানো হয় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। পরে বিকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি আমার ভাইয়ের অবস্থার অবনতির কথা আগে জানাতো তাহলে আমরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ’
শাহীনের মা জাহানারা বেগম বলেন. ‘ছেলের উপার্জনেই আমাদের সংসার চলতো। ছেলেমেয়ে ছোট থাকতেই তাদের বাবা মারা গিয়েছে। অনেক কষ্ট করে চার মেয়ে ও দুই ছেলেকে লালন-পালন করেছি। এখন সংসার ও শাহীনের মেয়ে সূচনার পড়াশুনা কীভাবে চলবে তাই নিয়েই চিন্তিত আছি।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা দেওয়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জন। আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে শাহীন ব্যাপারী আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মারা যান। বাকি ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ঢামেকে. দুই জন সিঙ্গাপুরে ও একজন ভারতের দিল্লিতে চিকিৎসাধীন।