৬ মণ বেগুনের দামে এক কেজি গরুর মাংস!

nonameনরসিংদীর পাইকারি বাজারে কমে গেছে বেগুনসহ সব ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম। বিশেষ করে গত এক মাস ধরে কৃষক তার উৎপাদিত বেগুন বিক্রি করে পরিবহন খরচও উঠাতে পারছেন না। এতে সার, কীটনাশকসহ খরচ মেটাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বাম্পার ফলনের কারণে সবজির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বেগুনের দাম কমে গেছে। তবে শিগগিরই সবজির দাম বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নরসিংদী জেলার শাকসবজির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার উৎপাদিত শাকসবজির প্রায় ৭০ ভাগই সরবরাহ করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। রফতানি করা হয় বিদেশেও। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে জেলার নয়টি পাইকারি সবজির বাজারেই সরবরাহ বেড়েছে বেগুন, লাউ, সিম, চিচিঙ্গা, ঝালিসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির। অন্যদিকে এ বছর বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষকরা জানান, বিগত এক মাস ধরে জেলার পাইকারি বাজার বেলাবো উপজেলার বারৈচা, নারায়ণপুর, রায়পুরার জঙ্গী শিবপুর, শিবপুর উপজেলা সদর, সিএন্ডবি বাজার, পালপাড়া বাজারসহ সবজির সব পাইকারি বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারলেও গত এক মাস ধরে বেগুনের দরপতন ঘটেছে। প্রতি কেজি বেগুন ২ থেকে ৩ টাকায় অর্থাৎ মণপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচসহ প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়া এসব বেগুন বাজারে আনতে পরিবহন খরচও যুক্ত হয়। এক মাস ধরে বেগুনের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ দূরে থাক, পরিবহন খরচও উঠাতে পারছেন না কৃষকরা। একই সঙ্গে কমে গেছে লাউসহ অন্যান্য সবজির দামও।

noname

এক মাসে আগে প্রতি পিস লাউ বিক্রি করা যেত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন প্রতি পিস লাউ বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকায়। এতে লোকসান গুনে সার, কীটনাশক ও মজুরি খরচ মেটাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন বেগুন চাষিরা।

গত সোমবার (০২ এপ্রিল) ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাবো উপজেলার বারৈচা সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির সমারোহ। কেউ ভ্যানগাড়ি, কেউ ইজিবাইক, কেউবা পিকআপ ভ্যানে ভরে বেগুন নিয়ে হাজির হয়েছেন বাজারে। বেগুনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও পাইকারি ক্রেতাদের মধ্যে এসব বেগুন কেনায় উৎসাহ ছিল কম। কদর না থাকায় কৃষকরা অনেকটা হতাশ হয়েই পাইকারি ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন।

বারৈচা গ্রামের বেগুন চাষি মো. আলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেগুন ক্ষেতে নিয়মিত সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। দাম বাড়ার আশায় এক মাস ধরে নিয়মিত জমির পরিচর্যা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

রহিমেরকান্দি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, জমিতেই প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা। তারপর পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা মণ। বর্তমান বাজারে এক কেজি গরুর গোশত কিনতে গেলে ৬ মণ বেগুন বিক্রির টাকায়ও হয় না।

noname

একই উপজেলার দেওয়ানেরচর গ্রামের মোহাম্মদ আলী ও বাচ্চু মিয়া বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে বেগুনের এমন দরপতন আর হয়নি। কষ্টার্জিত বেগুন নিয়ে আমরা এখন বড়ই বিপদে আছি। কীভাবে সংসার চলবে, কীভাবে ঋণ শোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। সব বেগুন চাষিরই এখন মাথায় হাত।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সবজির দাম কম বলে স্বীকার করছেন পাইকারি ক্রেতারাও। সবজির পাইকারি ক্রেতা আবুল মিয়া বলেন, ঢাকায় বেগুনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কিনে থাকি। এ বছর আমাদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। দাম বেশি থাকলে কৃষক পাইকার সবারই লাভ থাকে। এ বছর বাজারে চাহিদার তুলনায় বেগুনের সরবরাহ বেশি বলেই দাম কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, নরসিংদীর উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অধিক চাষি , আবাদি জমির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি বেগুনের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম কমে গেছে। তবে খুব দ্রুতই সবজির দাম বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।

চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা।