পাঁচ শিক্ষক লাঞ্ছিত, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

 



ঝিনাইদহঝিনাইদহের শৈলকুপার হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস বর্জন ও  হাটফাজিলপুর বাজারে বিক্ষোভ করেছে।
লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক শ্যামল বিশ্বাস, আজিজুল ইসলাম, উত্তম কুমার অধিকারী ও আবুল বাশার। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের আয়া রাশিদাকেও এই সভাপতি লাঞ্ছিত করে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জেল হোসেন বছর দেড়েক হলো হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। এরপর থেকেই দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয়ের অর্থলোপাট, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদারচণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা ও লাঞ্ছিত একাধিক শিক্ষক জানান, সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ে ঢুকে মিটিংয়ের কথা বলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে সব শিক্ষককে ডেকে পাঠায়। অন্যান্য দিনের মতো শিক্ষকদের কাছে হাত খরচের টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকার পরিমান বেশি হওয়ায় শিক্ষকেরা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে তোফাজ্জেল হোসেন রেগে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের চড়-থাপ্পর, লাথি-ঘুষি মারাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় কোমর থেকে ছুরি বের করে শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে মুখ না খোলার কথা বলে। সেসময় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করে।
সভাপতি জোরপূর্বক একটি ব্লাংক চেকে প্রধান শিক্ষকের সই নেয়। পরে জনতা ব্যাংক হাটফাজিলপুর বাজার শাখা থেকে ব্যালেন্স জেনে টাকার অঙ্ক বসিয়ে তুলে নেয় বলে শিক্ষকেরা জানান। তবে টাকার পরিমান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও কথা বলতে অপারগতা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের জিম্মি করে অর্থ লোপাট করে চলেছে। সে বেশিরভাগ সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে কোমরে ছুরি নিয়ে ঘোরে।

তবে তোফাজ্জেল হোসেন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলে, শিক্ষকেরাই সব টাকা-পয়সা খেয়ে ফেলে। ঠিক মতো ক্লাশ করায় না। তাই শিক্ষকদের একটু বকাঝকা ও শাসন করেছি।
শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হলে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) খাইরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্কুলের আশপাশে পুলিশ অবস্থান করছে।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, ঘটনাটি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। লাঞ্ছিত শিক্ষকরা তাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।