পুলিশকে টাকা না দেওয়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শামীম ও মনিরকে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

শামীম ও মনির

 

ফেনীর ফুলগাজীতে পুলিশকে টাকা না দেওয়ার কারণেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শামীম (২৫) ও মজনু মিয়া মনির (২৩)-কে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের স্বজনরা। তবে এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

নিহতের স্বজনদের দাবি, বুধবার (২৪ মে) দুপুরে ও রাতে পৃথকভাবে শামীম ও মজনুকে বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আর দেখা করতে দেওয়া হয়নি তাদের সঙ্গে। একপর্যায়ে রাতে খবর দিয়ে উভয়ের স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করে পুলিশ। এই টাকা না দেওয়ার কারণে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে তাদের হত্যা করা হয়।

শামীমের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বুধবার বেলা ২টার দিকে ফুলগাজী থানার এসআই শফিক এসে শামীমকে তুলে নিয়ে যায়। সে সময় বাড়ির পাশে জমিতে গরুর জন্য ঘাস কাটছিল শামীম। একই সময়ে রতন নামে আরও এক যুবককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে পুলিশ আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। রতনকে পরে পুলিশ ছেড়ে দিলেও টাকা দিতে না পারায় রাতে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।’  

নিহত মজনু মিয়া মনিরের বোন রেজিনা বেগম বলেন, ‘বুধবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ফেনী শহরের বড় মসজিদ এলাকায় বোনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ছাড়িয়ে আনতে ডিবি অফিসে গেলে পুলিশ দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ভোররাতে পুলিশ মনিরকে গুলি করে হত্যা করে। ’

রেজিনা আরও জানান, তার ভাই ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে দফায় দফায় মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে তাদের কাছ থেকে।

তবে স্বজনদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলগাজী থানার ওসি হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহত দুই যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের তুলে নেওয়া এবং তাদের পরিবারের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’  

এ ব্যাপারে ওসি হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘মাদকের টাকায় তারা তাদের পরিবার চালাত। তাই স্বজনরা এসব মনগড়া অভিযোগ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।’

বন্দুকযুদ্ধের ব্যাপারে ওসি বলেন, ‘চোরাকারবারিরা মাদকের চালান নিয়ে ভারত সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে প্রবেশ করেছে—এমন খবর পেয়ে  রাতে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। জামুয়া রাস্তার মাথায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শামীম ও মনির গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওই দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিন রাউন্ড কার্তুজ, ৭০০ ইয়াবা ও দুই শতাধিক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।’ ওই অভিযানে পুলিশের আট সদস্য আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।