তিস্তা সেচ ক্যানেলের সেচে বোরোর বাম্পার ফলন

বোরো ধানের ক্ষেততিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের আওতায় রংপুর কৃষি অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এবার  রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৪ টন বোরো ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ ভাগ জমির ধান কেটে ও মাড়াই করে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। কৃষকরা বলছেন, বাকি ২০ ভাগ ধান আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবেন তারা।

তিস্তা ব্যারেজের কমান্ড এলাকার সেচে নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, গঙ্গাচড়া উপজেলাসহ ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এ কারণে কৃষকরা ৩৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয় করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন ডালিয়া ডিভিশনের সেচ (পানি) সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে ৫ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ২ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে।

ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছেডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম এক পরিসংখ্যানে বলেন, বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রে এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করতে সেচ বাবদ খরচ হয় সাড়ে ১০ হাজার টাকা। ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে এক হেক্টর জমিতে বোরো চাষে খরচ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আর তিস্তা ব্যারাজের আওতায় (কমান্ড এলাকায়) এক হেক্টর জমিতে কৃষকের খরচ হয় মাত্র ১২০০ টাকা।

বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত পাম্পে এক হেক্টরে কৃষক ধান পাবে ৫ দশমিক ৫ টন। সেচ ক্যানেলে কৃষক প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন করছে ৬ টন। এতে ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে তিস্তার সেচে ধান উৎপাদন হবে ১২৫ কোটি টাকার।

তিনি আরও বলেন, ‘বোরো ধান আবাদের সময় উজান থেকে  চাহিদা মতো পানি যদি পাওয়া যেত তাহলে আমরা প্রথম ধাপেই ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারতাম। উজানের পানি স্বল্পতার কারণে আমরা ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পেরেছি। এটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।’

ধান শুকাচ্ছেন কৃষাণিরাপানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসমে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এতে সেচ কমান্ড এলাকায় কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মণ করে ধান উৎপাদন করে ঘরে তুলছে।

তিস্তার প্রধান সেচ খালের ধারে অনেক কৃষক সেখানে ধান মাড়াই করছেন। ওই এলাকার কৃষক আজিজার রহমান জানায়, বিঘাপ্রতি কেউ ২৫ মণ কেউবা ২৮ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা সেচের পানি দিয়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েছে। সোনালী ধানে ভরে গেছে বাড়ির উঠান। এখন শুধু চোখে পড়ে ধান আর ধান।

প্রসঙ্গত, নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৯ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান বিনষ্ট হয়। কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়ভাবে এর কোনও প্রভাব পড়বে না, বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।