‘সবকিছু পুড়ে ছাই, সংসার চালাবো কীভাবে’

ময়মনসিংহে হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীদের আহাজারি‘দোকানে তো মালামাল আগে থেকেই ছিল। গতকালও দেড় লাখ টাকার কাপড় আনছিলাম। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রোজার ঈদকে সামনে রেখে ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকার কাপড় তুলেছিলাম। এই ঈদে যে লাভ হবে তা দিয়ে পুরাতন ঘর ঠিকঠাক করবো ভেবেছিলাম। এখন কীভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাবো সেটাই ভাবছি।’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন ময়মনসিংহ হকার্স মার্কেটের দোকানদার সোহেল মিয়া।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকালে ময়মনসিংহ হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের আহাজারির এমন চিত্রই দেখা যায় মার্কেটের সামনে।  সোহেল রানার মতো হকার্স মার্কেটের দেড় শতাধিক দোকানদারের একই অবস্থা। আগুনে দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের আনন্দ তো এখন দূরের কথা, অনেকেই বলছেন তারা পথে বসে গেছেন। কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়েই তারা চিন্তিত।

হকার্স মার্কেটে আগুন

হকার্স মার্কেটের দোকানদার তারা মিয়া জানান, ‘সকাল ৭টার দিকে মোবাইলে ফোনে জানতে পারি হকার্স মার্কেটে আগুন লেগে আমার দোকানের সব মালামাল পুড়ে গেছে। দৌড়ে এসে দেখি অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই। কোনও দোকানদারই মালামাল বের করতে পারেননি।’

জুতা ব্যবসায়ী আরমান বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে জুতা এনে মজুত করেছিলাম। রোজার ঈদেই মূলত বেশি বেচাবিক্রি হয়।  ঈদের এই লাভ দিয়েই সারা বছর সংসারসহ দোকানের কর্মচারীদের খরচ চলে। আগুনে সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন আর কিছুই অবিশষ্ট নাই।’হকার্স মার্কেটে আগুন

হকার্স মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হক জানান, হকার্স মার্কেট ছাড়াও আশপাশের বেশ কিছু দোকান পুড়ে গেছে। আগুনে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালামাল পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমান বলেন, ‘মার্কেটের কোনও একটি দোকান থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লাগতে পারে। তবে কী পরিমাণ মালামাল পুড়েছে বা ক্ষতির পরিমাণ কত সে বিষয়ে এখনই বলা সম্ভব না।’  হকার্স মার্কেটে আগুন

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করার কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-আমীন। তিনি জানান, ‘আগুনের কথা জানতে পেরে আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন। দোকানের উদ্ধার করা মালামাল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেই মালামাল খোয়া যাতে না যায় সে বিষয় পুলিশ সদস্যরা তৎপর আছে। সবার নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে।’

এদিকে হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের আর্থিক সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। ঘটনার পর হকার্স মার্কেট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের তিনি এই কথা জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া দোকানের মালামালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করার পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমি কথা বলবো। আগামী দুই দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করবো।’ এ সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হকার্স মার্কেটে আগুন লাগে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে ময়মনসিংহ ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

আরও পড়ুন- ময়মনসিংহে হকার্স মার্কেটে দেড়শ' দোকান পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা