প্রশাসনের ভয়ের কারণগুলো উল্লেখ করে বিএনপির মনোনীত ও ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটের দিন ও আগ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের ভূমিকা কেমন থাকবে তা বলতে পারছি না। নিয়মিত অভিযানের নামে আমাদের নেতাকর্মী, সমর্থকদের হয়রানিমূলক গ্রেফতার করতে পারে। আবার নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের বাড়াবাড়ি খুলনা ও গাজীপুরের মতো হয় কিনা আশঙ্কা রয়েছে। যারা ভোটগ্রহণ করবে তাদের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ থাকবে, ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি এজেন্ট ও ভোটাররা ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নও রয়েছে।’
অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অপপ্রচারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ১৪ দলীয় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘অপপ্রচার হচ্ছে এমন জিনিস এটি নিত্য নতুনভাবে আর্ভিভূত হয়। যারা এটি করেন, তারা এতোটাই সিদ্ধহস্ত, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অপপ্রচারে এতোটাই সিদ্ধহস্ত, তারা নন ইস্যুকে ইস্যু বানাতে খুবই পটু এবং একেবারে মিথ্যা বানোয়াটকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। কম্পিউটারে কম্পোজ করে, তাদের মোবাইল, ট্যাবে যে ছবিগুলো থাকে, একেবারে উঠান বৈঠকের ছবির মতো দেখায়। যেমন-আযান হচ্ছে, সে সময় আওয়ামী লীগের সভা চলছে। এমন পুরো বানোয়াট ছবি মানুষজনকে দেখায়। অথবা দেখানো হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মীর দ্বারা সাধারণ মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে-যেটি আদৌ সত্য না-সেটাও সত্য বলে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে মিথ্যাকে ফলাও করে প্রচার করে তারা। যেমন হেফাজতের যে ঘটনা ঘটেছিল ঢাকায়, সেটা এক পয়সার হলে ৯০ পয়সার বলে অপপ্রচার করেছিল জামায়াত-শিবির। এবার হেফাজত কী করবে এখনও জানি না। তবে এবার বিএনপির নেতাকর্মীরা অপপ্রচার চালানো শুরু করে দিয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখায় যে, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে উন্নয়নের নামে পুরো বস্তি উচ্ছেদ করবো। ধানের শীষে ভোট না দিলে দেশ ছাড়া করার জন্য কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আবার তারা বলে, আমি নগরীতে কোনও উন্নয়ন করিনি। সব উন্নয়ন হয়েছে আমার আগে। কিন্তু নগরবাসী বিষয়টি ভালোভাবে অবগত আছেন। এই অপপ্রচারে তাদের খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না।’
পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানোর জায়গা না রাখা এবং ছিঁড়ে নষ্ট করার যে অভিযোগ বিএনপি করেছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী নগরীতে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানোর অনেক জায়গা রয়েছে। সেখানে বিএনপির প্রার্থী টাঙাতে পারে। পরিকল্পনার অভাবে বিএনপির প্রার্থী প্রচারে পিছিয়ে পড়েছেন। হার নিশ্চিত জেনে বিএনপি প্রচারের শুরুতেই অপপ্রচার শুরু করেছে। এবার ভোটাররা বিএনপির অপপ্রচার গ্রহণ করবে না।’
খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, ‘জামায়াতের নারীরা অপপ্রচারে বেশি পটু। তাদের ব্যাপারে পুলিশকে আগে থেকেই অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পড়ায় পড়ায় আমাদের ছেলেমেয়েদের তাদের বিষয়টি নজরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা (জামায়াত) অত্যন্ত সুসংগঠিত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। তাই তারা নিজেদের কাজ উদ্ধারের জন্য অর্থ খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাংসদ মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘১ নম্বর ওয়ার্ডসহ অন্য ওয়ার্ডে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, ও ফেস্টুন সরকার দলীয় প্রার্থীর সন্ত্রাসীর টানাতে বাধা দিয়েছে। কোথায় এগুলো টানালে তারা ছিড়ে নষ্ট করে ফেলছে। এছাড়াও ভোটারদের এখন থেকেই ধানের শীষে ভোট দিতে নিষেধ করছে। এমনকি ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া জন্য ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে। গেলেও নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেছে।’
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেনকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে জামায়াত পোস্টার লাগিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে তা পরে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেনি। তবে ১, ২, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৭, ১৮, ২৪, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী আসনে ৬ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করছে। আবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত বিএনপি একাই প্রচারণাসহ সব কাজ করছে। যেখানে জামায়াতের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করা যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন ‘কেন্দ্র থেকে ২০ দলীয় একক প্রার্থীর সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সেখানে রাজশাহীতে বিএনপি প্রার্থী ছাড়া কেউ নেই। এতে করে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে মেনে নেওয়া হয়নি। বিএনপি এখন ঘর গোচ্ছাছে। তারা জানে জামায়াত তো আমাদের সঙ্গে আছে। এক সময় আমাদের ডাকবে। ২০ দলীয় বৈঠক করা হবে। তখন আমাদের কাজ শুরু হতে পারে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কোনও মান অভিমান নেই। আর কাউন্সিলরদের নিয়ে জোট ভাবছে না।’
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রসঙ্গে আবু মোহাম্মদ সেলিম আরও বলেন, ‘এখানে জামায়াতের একটা ভালো ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাই জামায়াতকে নিয়ে লিটন ভাইয়ের ভয়। এটা অমূলক চিন্তা। আমরা গত বছর কী অপপ্রচার করেছি সেটা পরিষ্কার করে বলতে হবে। রাজশাহীর মানুষ অনেক সচেতন। এখানকার নির্বাচনে হামলা-ভাঙচুর করতে কেউ যাবে না। কারণ রাজশাহী মানুষ শান্তিপ্রিয়।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমর্থ- এটা ভুল ধারণা। আমরা বাজে খরচ করি না। আমাদের চলাফেরা ও খরচে একটা নিয়মতান্ত্রিকতা আছে। যেখানে অন্যদের একটা কাজ করতে গিয়ে এক কোটি টাকা খরচ হয়। সেখানে আমাদের দুই লাখ টাকা হলেই চলে। এজন্য অনেকে ভাবে আমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী।’
জামায়াত নেতা আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না তা দেখছি। কারণ অহেতুক আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘কাউকে অহেতুক গ্রেফতার করার প্রশ্ন আসে না। আর চলমান অভিযানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আশ্রয় নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানে নির্বাচন কেন্দ্রীক কোনও আটক-গ্রেফতার করা হয় না।’
রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতামূলক ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।’
রাসিক নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৬০ জন ও ১০টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৫২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। আগামী ৩০ জুলাই ১৩৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন।
আরও পড়ুন- রাজশাহীতে প্রচারণা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আ.লীগ-বিএনপির