বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে দিনভর যানজট, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকেই তীব্র যানজট দেখা গেছে। সেতুর পশ্চিম পাড়ে কড্ডার মোড় থেকে কোনাবাড়ি হয়ে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথেই যানবাহনের তীব্র জট ছিল। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও জট খুলতে পারেনি। সন্ধ্যার পর কিছুটা স্বাভাবিক হলেও যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে যানজটের কারণে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে ঘরমুখো উত্তরবঙ্গগামী মানুষরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল মোড়ের দক্ষিণে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের চান্দাইকোনা পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি ও দিনভর থেমে থেমে যানজট ছিল। সকালে জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা বাজারে দুটি বাসের দুর্ঘটনার কারণে দুপুর থেকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের এক ঘণ্টার পথ যেতেই ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে।

জানা যায়, সোমবার রাতে মেয়েকে নিয়ে মানিক পরিবহনে করে ঢাকার গাবতলী থেকে দেশের বাড়ি লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন সাংবাদিক তানজিমুল ইসলাম নয়ন। মঙ্গলবার সকাল ১০ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে সিরাজগঞ্জের সীমারেখায় প্রবেশ করেন। সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ব্রীজের পশ্চিমে তীব্র জটের কারণে টানা প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা আটকে থাকেন। বিকাল ৫টার পর তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা পাড় হয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ফুডভিলেজ রেস্টুরন্টে পৌঁছান। বিকেল সাড়ে ৫টায় ফুড ভিলেজ থেকে গাড়ি ছাড়লেও রাত ৮টার দিকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কাছে আটকে পড়েন। রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি পলাশবাড়িতে পৌঁছান।  

তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ পার হতে লেগেছে তার প্রায় ৭ ঘণ্টা এবং শেরপুর থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড় পর্যন্ত এক ঘণ্টার পথ ৩ ঘণ্টায়ও পার হতে পারিনি। প্রচণ্ড গরমে অবস্থা খারাপ। পুরো বাসের যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।’

ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন ঢাকার গাবতলী থেকে নীলফামারী যাচ্ছেন। সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনি হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে নীলফামারীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তিনি বগুড়ার মোকামতলায় আটকে রয়েছেন বলে জানান।  

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের কড্ডা ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বেলায়েত আলী বলেন, ‘একটি লেনের গাড়ির চালকরা অধৈর্য হয়ে অন্য লেনে ঢুকে পড়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কোনাবাড়ি থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে পর ঢাকার দিকে যানবাহন চলাচলে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও উত্তরাঞ্চল রুটে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়।’  

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘সেতুর পাড়ে কড্ডার মোড় ও কোনাবাড়িতে যানজটের কারণে হাটিকুমরুল মোড়ে তার প্রভাব পড়ে। সন্ধ্যা ৬টার পর অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। অপরদিকে হাটিকুমরুল মোড়ের দক্ষিণে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের চান্দাইকোনা পর্যন্ত সওজ-এর রাস্তা খারাপের কারণে দুপুরের দিকে সেখানে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হলেও এখন তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে কোনাবাড়ি হয়ে নলকা সেতু পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব মূলত জেলা পুলিশের।’

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য পুলিশ মহাসড়কের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছেন। চালকদের হুড়োহুড়ি ও অধৈর্যের কারণে একটি লেন ছেড়ে অন্য লেনে ঢোকার জন্যই যানজটের সৃষ্টি করছে।’