গোলাপগঞ্জ পৌরসভা উপনির্বাচন: প্রার্থী পাচ্ছে না বিএনপি

গোলাপগঞ্জ পৌরসভা উপনির্বাচনসিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচন আগামী ৩ অক্টোবর। রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রার্থী নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মহিউস সুন্নাহ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। ফলে প্রার্থী নিয়ে সংকটে পড়েছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন, সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু । এদিকে, যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দিয়েছেন। এমনকি তারা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েই এমন কাজ করেছিলো। আমাদের দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে অনেকটা বেকায়দায় রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোটে আরিফুল হক মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যদি জাল ভোট দেওয়া না হতো তবে আরিফুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হতেন। এছাড়াও নির্বাচনকালীন ধরপাকড়ের বিষয়ে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও পুলিশ আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করেছে। যারা এখনও কারাগারে আছেন। এসব করণে আতঙ্কিত হয়ে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উপনির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ মেয়র প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না। সবার মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা প্রার্থীদের মধ্যে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দল থেকে যাকে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে, তিনি নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। যে কারণে এখনও আমরা প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারিনি। অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন, নির্বাচনে দাঁড়ালে অহেতুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হয়রানি হতে হবে। তবে প্রার্থী নির্ধারণে আজ (৮ সেপ্টেম্বর) আমাদের একটি বৈঠক রয়েছে। আশা করি, এ বিষয়টির সুরাহা হবে।’

পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০০১ সালের জুন মাসে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন সিরাজুল জব্বার। এরপর ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জাকারিয়া আহমদ পাপলু। পরবর্তীতে আইনি জটিলতার কারণে আর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন সিরাজুল জব্বার। আর জাকারিয়া আহমদ পাপলু দলীয় মনোনয়ন পেয়েও তৃতীয়স্থানে ছিলেন।

নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মে পৌরসভার মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরী মারা যান। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এই পদটি শূন্য ঘোষণা করে। বিধি অনুযায়ী এই পৌরসভায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর)। সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) মনোনয়ন বাছাই, ও সোমবার (১৭ সেপ্টম্বর) প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ এবং বুধবার (৩ অক্টোবর) ভোট গ্রহণ হবে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ পৌরসভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ৬৩২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৯৫৮ ও নারী ভোটার ১০ হাজার ৬৭৪।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, ‘দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমাকে জয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ। ভোটাররাও আমাকে এবারও মেয়র হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন।’

যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশা বাদি ছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ড আমাকে তা দেয়নি। ভোটারদের কাছ থেকে আমি যে সাড়া পাচ্ছি তাতে আমার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও উপায় নেই। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’