বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনজীবন

 
ঝালকাঠিঝালকাঠির রাজাপুরের বিভিন্ন খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর ফলে মাছের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণী মারা গিয়ে পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছে না। এতে পরিবেশ ও মৎস্যসম্পদ বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়,কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় একশ্রেণির মৎস্যশিকারি বিভিন্ন কীটনাশক সঙ্গে নিয়ে যান। জোয়ার আসার কিছু আগে ওই কীটনাশক চিড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খালের পানিতে ছিটিয়ে দেন। এর ফলে একপর্যায়ে ওই এলাকায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে ওঠে। পরে ওই মাছ আহরণ করে বাজারে সরবরাহ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন হাজরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিষক্রিয়ার ফলে মানবদেহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তিনি আরও জানান, অধিক মুনাফার আশায় জেলে নামধারী একটি চক্র দিনের পর দিন এই অপরাধ করে যাচ্ছে। বন্য প্রাণী ও পরিবেশের জন্য এটা চরম হুমকি। বন বিভাগের উচিত আইনের সঠিক প্রয়োগ, সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ ধরনের অপতৎপরতা রোধ করা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের ঘটনা ঘটে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝালকাঠির রাজাপুরের কেওতা, শুক্তাগড়, কাঠিপাড়া, বড়ইয়া, গালুয়া, মঠবাড়িয়া, সাতুরিয়া, নৈকাঠি, বারবাকপুর, ফুলহার, কৈবর্তখালী, সদর উপজেলার কির্তিপাশা, বেশাইনখান, শেখেরহাট, নথুল্লাবাদ, কেওড়া, বাসন্ডা, নবগ্রাম, বিনয়কাঠি, আশিয়ার, পোনাবালিয়া, গাভারামচন্দ্রপুর, গাবখান, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি, মোল্লারহাট, কুশঙ্গল, রানাপাশা, নাচনমহল, সিদ্ধকাঠি, দপদপিয়া, সুবিদপুর, কাঠালিয়ার আমুয়া, কৈখালী, শৌলজালিয়া, চেচরীরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার খালে বিষাক্ত রোটেনন (পাউডার) অথবা সাইবারমেথিং (লিকুইড) প্রয়োগ করে মাছ নিধন করা হয়। মাসখানেক ধরে জেলাজুড়েই এভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

জোয়ারের সময় খাল যখন পানিতে থই থই করে তখন খালের পাশের ঝোঁপে মাছ লুকিয়ে থাকে। তখন ঘন ফাঁসের জাল এবং চরগড়া দিয়ে ঝোঁপ আটকে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে বিষ প্রয়োগ করা হয়। বিষ প্রয়োগের ফলে পানি কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করে। চক্রটি জাল ফেলে সেই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছে। শুধু মাছই মারা যাচ্ছে না, বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগের ফলে সব ধরনের জলজ প্রাণীই মারা যাচ্ছে। এতে একদিকে বিলুপ্তির মুখে পড়ছে দেশের মৎস্যসম্পদ অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে জীববৈচিত্র্য। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী নির্বিচারে মারা পড়ছে। এতে মাছের প্রজনন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ মেশানো পানি পান করে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণী জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।