সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ড: চার্জ গঠনের শুনানি পেছালো আরও ৪ মাস

আব্দুল হাকিম শিমুলদৈনিক সমকালের  শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরু সোমবার (১৫ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-দ্বিতীয় আদালতে হাজির না হওয়ায় চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ আবারও পেছালো প্রায় ৪ মাস। একই আদালত থেকে এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। আগামী বছরের ৩ ফেব্রুয়ারী শিমুল হত্যা মামলার দুই বছর হতে যাচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চার্জ গঠন শুনানির দিন সোমবার (১৫ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে ধার্য থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জেলা কারাগারে থাকা মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুরের আলোচিত ও সাময়িক বহিষ্কৃত পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু আদালতে হাজির হননি। এ কারণে চার্জ গঠনের তারিখ ফের পেছালো। মিরুকে সোমবার (১৫ অক্টোবর) আদালতে হাজির করার জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে প্রডিউসড ওয়ারেন্ট (পিডাব্লিউ) ইস্যু করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ছিল। জেলা কারাগারে প্রডিউসড ওয়ারেন্ট পাঠানোর মাধ্যমে মিরু ছাড়াও বাকি ৩৭ জন আসামিকে আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন জেলা বিচারক।

তবে এ মামলার ৩৭ জন আসামি যারা এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে জেলা জজ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন, তারাও গতকাল রবিবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে এ হাজির হয়ে আইনজীবীদের সহযোগিতায় আবেদনের মাধ্যমে বদলি জামিন পান। বিচারক মো. জাকির হোসেন তাদের বদলি জামিন মঞ্জুর করেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।  এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা জজ আদালত থেকে জেলা ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালত সরকারি কৌশুলি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. শামসুল হক ও আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. রফিক সরকার সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার ৩৭ জন আসামির বদলি জামিন ও মামলাটির চার্জ গঠনের শুনানির পরবর্তী ধার্যকৃত দিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তী তারিখে আগের মতোই মামলার সব আসামিক হাজির থাকার নির্দেশ দেন বিচারক।

এদিকে, আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী শিমুলের স্ত্রীসহ তার নিকটতম স্বজনরা। শিমুলের সহকর্মী ও স্বজনদের দাবির পর মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি পেতে জেলা প্রশাসকের সুপারিশপত্র প্রায় ১০ মাস আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তার কোনও সুরাহা হয়নি। অজ্ঞাত কারণেই এখনও ঝুলে আছে দ্রুত বিচারে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি।

শিমুলের খালাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ সোমবার দুপুরে বলেন, ‘২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মিরুর বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তার ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন মারা যান শিমুল। ঘটনার পর শিমুলের স্ত্রী বাদী হয়ে স্বামী খুনের দায়ে মিরু এবং তার সহোদর মিন্টুসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় মামলা করেন। মাত্র দুই মাসের মধ্যে শাহজাদপুর থানা পুলিশ আদালতে চার্জশিটও জমা দেয়। অথচ গত প্রায় ১৮ মাসেও আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি। এমনকি মামলাটি দ্রুত বিচারে স্থানান্তরে শিমুলের সহকর্মী ও আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা হলেও অজ্ঞাত কারণে মামলাটি এখনও সেখানে স্থানান্তর করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরা আবার ভাইয়ের খুনের উপযুক্ত বিচার পাব কিনা তা নিয়েও আমরা এখন সন্দিহান হয়ে পড়েছি।’