কারেন্ট জাল উৎপাদন থেমে নেই মুন্সীগঞ্জে

কারেন্ট জাল (ছবি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)মুন্সীগঞ্জের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে গত ৭ অক্টোবর থেকে জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে জেলা মৎস্য অফিস ও স্থানীয় প্রশাসন। গত কয়েকদিনের অভিযানে বিভিন্ন সময় আটক জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড দেওয়া হয় এবং অবৈধ জাল ও আহরণ করা ইলিশ জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে কমপক্ষে ১৫ লাখ মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। কিন্তু অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদনের কারখানাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। ফলে ফের কারেন্ট জাল সংগ্রহ করে নদীতে নামার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার জাল তৈরির কারখানায় এসব অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হয় এবং মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশে তা সরবরাহ করা হয়। জাল তৈরির কারখানার প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে জেলা মৎস্য অফিসের কাছে সঠিক কোনও হিসাবও নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার ছোট বড় কারখানায় এই অবৈধ জাল উৎপাদিত হয়। কিছু কিছু কারখানা অবৈধ কারেন্ট জাল বা মনোফিলামেন্ট উৎপাদন বাদ দিয়ে বৈধ মাল্টিফিলামেন্ট জাল উৎপাদন শুরু করেছে। তবে এই ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস। 

অন্যদিকে, যেসব বড় কারখানা মনোফিলামেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, তাদের কাছ থেকে মেশিন সংগ্রহ করে অন্যান্য অনেক ব্যক্তি নিজেদের ঘরে বসেই অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, ‘অবৈধভাবে কারেন্ট জাল তৈরির কারখানাগুলোতে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত কয়েকমাসে বিভিন্ন জাল কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয় এবং পাঁচ লাখ টাকার ওপরে জরিমানা করা হয়। তবে আমরা কাজটি পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি। সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে আমার একার পক্ষে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিযান পরিচালনা করতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দও পাওয়া যায় না। এছাড়াও অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণে অভিযান পরিচালনার কাজটি সম্ভব হয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয়াগাও, পঞ্চসার, মুক্তারপুর এলাকায় অবস্থিত জাল কারখানাগুলো থেকে উৎপাদিত অবৈধ কারেন্ট জাল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। যদি কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করা যেত তাহলে সারাদেশে নদ-নদীতে অভিযান পরিচালনা করার দরকার ছিল না।’ কারেন্ট জাল ধ্বংস (ছবি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)

সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, ‘কিছু কিছু কারখানা অবৈধ কারেন্ট জাল বা মনোফিলামেন্ট এর পরিবর্তে বৈধ মাল্টিফিলামেন্ট জাল উৎপাদন করতে শুরু করেছে। কিন্তু এরপরও প্রচুর পরিমাণে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি আগে যেসব কর্মচারী বড় বড় জাল কারখানায় কাজ করতো তাদের অনেকেই একটি দুইটি করে মেশিনের ব্যবস্থা করে ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছে এবং অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরি করছে। এদের সংখ্যা কত হবে তার কোনও হিসাব নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি এরকম প্রায় দুই হাজার জাল তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিদিন কী পরিমান জাল উৎপাদিত হচ্ছে তার হিসাব পাওয়া সম্ভব না।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারেন্ট জালের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স দেখিয়ে থাকি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, ‘৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অবৈধভাবে মা ইলিশ আহরণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান নিয়ে আমরা ব্যস্ত আছি। তাই জাল কারখানাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তবে ২৯ অক্টোবর থেকেই আবার অবৈধভাবে কারেন্ট জাল উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ 

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহম্মেদ জানান, ‘অবৈধভাবে মা ইলিশ যাতে ধরতে না পারে আমরা সেদিকেই জোর দিয়েছি। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই জাল কারখানাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’