ঢাবিতে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কিত জেরিন

বাবা-মার মাঝে জেরিন খাতুন (ছবি– প্রতিনিধি)

বাবা দিনমজুর। তবু এপর্যন্ত মেয়ের পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছেন দিনমজুরি ও চানাচুর বিক্রি করে। মেয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই তার। মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সংশয়ে বাবা; শঙ্কিত মেয়েও।

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বদলাগাড়ী গ্রামের দিনমজুর জহুরুল ইসলামের মেয়ে জেরিন খাতুন। এবার ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাক্রমে ৮৭৫ তম হয়েছেন তিনি। আগামী ২১ অক্টোবর ‘খ’ ইউনিটে মৌখিক পরীক্ষা আছে জেরিনের। ভর্তির টাকা দূরে থাক, ২১ অক্টোবর ঢাবিতে আসা-যাওয়ার টাকারই ব্যবস্থা হয়নি তার।

এবছর এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান জেরিন। ফলাফলে সর্বোচ্চ ১০৯০ নম্বর পেয়ে জেলার মধ্যে এবার তিনি প্রথম হন। কিন্তু ঢাবিতে ভর্তির ফরম পূরণের টাকাও পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে তার স্কুলের প্রিন্সিপাল শাহাফুল ইসলাম শোভনের সহযোগিতায় ফরম তোলেন।

জেরিনের বাবা জহুরুল ইসলাম দিনমজুর ও মা নুরবানু গৃহিণী। সামান্য আয়ে চার জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় জহুরুলকে। ছোট মেয়ে লিজা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে স্থানীয় জিনিয়াস কিন্ডার গার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) রাতে জেরিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ টিনের ঘরে দুই বোন ও তাদের বাবা-মার বসবাস। ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে জেরিন চাপা কান্না লুকানোর চেষ্টা করেন।

২০১৩ সালে স্থানীয় ইদ্রাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান জেরিন। ২০১৬ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও জিপিএ-৫ পান। এরপর ২০১৮ এইচএসসিতে সাদুল্যাপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন জেরিন। পড়াশুনার খরচ কমাতে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের বিস্তারিত ফরম (ছবি– প্রতিনিধি)

জেরিনের বাবা জহুরুল বলেন, 'বছর তিনেক আগেও গ্রাম ঘুরে চানাচুর বিক্রি করেছি। বাড়ি-ভিটে আর ২০ শতক জমিই আমার সম্বল। দুই মেয়ে লেখাপড়া করায় লোক-লজ্জায় চানাচুর বিক্রি ছেড়ে দিনমজুরের কাজ শুরু করি। কখনো কৃষি জমিতে, কখনো ইটভাটায় কাজ করি। সামান্য আয়ে সংসার চলে না, খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। ধার-দেনা করে চিকিৎসা চলে। আমার পক্ষে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অসম্ভব। সমাজের বিত্তবান কেউ যদি আমার মেয়ের ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ বহনে হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে আমার মেয়ের স্বপ্ন পুরণ হয়।’

জেরিনের মা নুরবানু বেগম বলেন, ‘স্বামীর আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। দুঃখ, কষ্টে দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। বড় মেয়ে ভালো ফলাফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ আনন্দে বুক ভরে যায়। কিন্তু আনন্দ নেই আমাদের। জেরিনের ভর্তি, আবাসিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য যে সব খরচ লাগবে, কিভাবে বহন করবো, ভেবে পাচ্ছি না।’

জেরিন বলেন, ‘কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতা পেয়েছি। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। কিন্তু এখন আর সামনে আগানোর উপায় দেখছি না। তবে টিউশনি করে হলেও আমি পড়তে চাই।’ ইংরেজি ও আইন বিষয়ে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা শিক্ষকতা করার ইচ্ছে জেরিনের। এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

জিনিয়াস ক্যাম্পাস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মো. শাহাফুল ইসলাম শোভন বলেন, ‘অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী জেরিন। তাকে সবসময় শিক্ষকেরা সহযোগিতা করেছেন। চেষ্টা করেও জেরিনের বৃত্তির ব্যবস্থা হয়নি, সহযোগিতায় এগিয়েও আসেনি কেউ। বাড়িতে মাঝে মাঝে টিউশনি করে জেরিন। জেরিনের পাশে দাঁড়ানো দরকার।’

জেরিনের উচ্চশিক্ষায় বিত্তবানদের সহায়তার কামনা করেছে তার পরিবার। জেরিনের পাশে দাঁড়াতে বা সহযোগিতা করতে চাইলে তার বাবার মোবাইল ফোন নম্বর– ০১৭৪২-২৩৪৭২৩ ও তার শিক্ষকের মোবাইল নম্বর– ০১৭২৭-৯৮৪১২৩ এবং ০১৭৯৩-৮০০৩৮৩ তে যেকেউ যোগযোগ করতে পারবেন।