প্রত্যাবাসন না হওয়ায় স্বস্তি!



রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ“বর্মা আমাদের ‘ঝিনুসাইক’ করছে, মা-বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যে জমি থেকে বিতাড়িত করেছে সেই জমিতে ফিরতে চাই। রোহিঙ্গা হিসেবে কার্ড দিলে স্বেচ্ছায় ফিরে যাবো। কিন্তু তার আগে সকল নির্যাতনের বিচার চাই।’

বৃস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উনচিপ্রাং শরণার্থী ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারী ওবাইদুল হক এ দাবি জানান। এ সময় তার হাতে ‘নো বাঙালি, ইয়েস রোহিঙ্গা’ লেখা ফেস্টুন ছিল।

রোহিঙ্গা এই যুবকের বাড়ি মিয়ানমারের কুয়ার বিল গ্রামে। গত বছর সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি।

ওবাইদুল হক জানান, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে দেশে পাঠানো হতে পারে—এই ভয়ে দিন কাটছিল তার। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তাসহ নিজ দেশে ফিরতে চান তিনি। তবে এই মুহূর্তে ফিরে যেতে হবে না শুনে তিনি খুশি।

গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ৩০ পরিবারের ১৫০ জনের প্রত্যাবাসনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু অবেশেষে সেটি হয়নি। এখন ঢাকার সঙ্গে কথা বলে পরের তারিখ ধার্য করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

এদিকে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক কিনা, তা যাচাই করার দায়িত্ব জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা— ইউএনএইচসিআরের। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে। তবে সেদেশে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি সংস্থাটির।  

রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভটেকনাফ উনচিপ্রাং ক্যাম্পে বাস করা রোহিঙ্গা আমান উল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। কেননা তাদের জুলুমবাজদের দেশে যেতে হচ্ছে না। তবুও তারা সেদেশে ফিরে যেতে রাজি আছে। কিন্তু তাদের যেসব দাবি ছিল সেগুলো মেনে নিতে হবে।’

নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না নিয়ে তারা ফিরতে চান না বলে জানিয়েছেন নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর এক নেতা মোহাম্মদ ছব্বির। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। প্রত্যাবাসন তালিকার নাম রয়েছে এমন লোকজন ভয়ে রয়েছেন। কিন্তু প্রত্যাবাসন না হওয়ায় তারা এখন স্বস্তিতে আছেন। তবুও প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।’ 
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রাণে বাঁচতে  সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা এদেশে ছিল। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

গত বছর ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে গত ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। এরপর এক বছর পেরিয়ে গেলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।