খুলনায় ৭৮৯ জন নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ কৃতী নবীন নাবিকদের পদক প্রদান করেনবাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৮-বি ব্যাচের ৭৮৯ জন নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও মার্চপাস্টের সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতী নবীন নাবিকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

নৌবাহিনী ২০১৮-বি ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে মো.সাইফুল ইসলাম ডিই/ইউসি/ইউটি পেশাগত ও সকল বিষয়ে সেরা চৌকস নাবিক হিসেবে ‘নৌপ্রধান পদক’ লাভ করেন। এছাড়া মো. মোস্তাকিম আলম শিমুল ডিই/পিএম/-২/ইউটি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ এবং রাসেল মীর ডিই/ইউসি/ইউটি তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘তিতুমীর পদক’ লাভ করেন।

নৌপ্রধান নবীন নাবিকদের উদ্দেশে ভাষণে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

নৌপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা এবং পরবর্তী সময়ে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটি উন্নত দেশের গর্বিত নাগরিক হতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি আধুনিক ত্রিমাত্রিকা নৌবাহিনী হিসেবে সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নৌবহরে যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন, ফ্রিগেট, আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিন পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং আধুনিক সামরিক সরঞ্জামাদি। অন্যদিকে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন স্থাপনা, আধুনিক নৌঘাঁটি, প্রশাসনিক ভবন, বাসভবন ও আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এবং নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ের মতো বৃহৎ ও উন্নতমানের প্রশিক্ষণ স্থাপনা। তাছাড়া নিজস্ব সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ডে ইতোমধ্যেই দুটি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মিত হয়েছে এবং আরও পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট ও তিনটি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।পাশাপাশি, চট্টগ্রাম ড্রাইডকে ছয়টি আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া তৈরির চলমান রয়েছে।’

নৌপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান সরকার নৌ সদস্যের কল্যাণে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নৌ সদস্যদের আবাসন সংকট ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে সম্প্রতি সকল নৌ অঞ্চলে নির্মিত ২২টি বহুতল ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত নৌ সদস্যদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত বিএন হাউজিং প্রজেক্ট সাভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।’ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উত্তরোত্তর এই উন্নতি ও সাফল্যের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবা ও দেশ গড়ার পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেওয়ায় নবীন নাবিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে হয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মহান সৃষ্টিকর্তার উপর অবিচল বিশ্বাস রেখে উচ্চ মনোবল ও সাহস নিয়ে একযোগে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজে অন্যদের মধ্যে সহকারী নৌপ্রধান (পার্সোনেল) রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক এবং খুলনা ও যশোর এলাকার উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ নাবিক ও নবীন নাবিকদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।