বোরো মৌসুমের শুরুতেই সুনামগঞ্জে শ্রমিক সংকট

222

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, কৃষি-শ্রমিক কমে গেছে অনেক। একসঙ্গে সবখানে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও অনেক বেশি টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। অন্যান্য সব খরচও বেড়েছে। ফলে চাষাবাদের খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা বিনিয়োগের খরচটাই হয়তো উঠবে না।

শ্রমিক সংকটের ব্যাপারে সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের কৃষক কদ্দুছ মিয়া বলেন, ‘ক্ষেত লাগাইতাম, কামলা মুনি পাই না। যাও মিলে,  চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টেকা চায়  রোজ, এর লাগি বিপদে আছি।’

কুদ্দুছ মিয়া জানান, তিনি বল্লভপুর গ্রামের পাশের কানলার হাওরে ১০ কেয়ার জমিতে বোরো ধান আবাদের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ কেয়ার জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পেরেছেন।

সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের কৃষক  মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কামলারা এখন হাওরে কৃষি কাজের চেয়ে অন্যত্র কাজ করতে বেশি আগ্রহী। কারণ একদিন ক্ষেতে কাজ করলে যে মজুরি পান তারা, অন্য কোনও কাজ করলে তার চেয়ে বেশি মজুরি পান। তাই ধান রোপণ ও কাটার সময় হাওর এলাকায় শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।’  

একই গ্রামের কৃষক শরাফত আলী বলেন,  ‘গতবারের আগের বার বন্যায় সব জমি নষ্ট করছে। গেল বারের ফসল দিয়ে ঋণ-ফিন মারছি। এইবার ক্ষেত গিরস্থির জন্য কোনও টেকা-পয়সা হাতে নাই। ঋণ কইরা ক্ষেত লাগাইতাছি।’   

আব্দুর রহমান বলেন, ‘ক্ষেত গিরস্থি করইরা অখন বিপদে পড়ন লাগে। ২ মণ ধান বেইচা সারের দাম হয় না। এছাড়া কামলার টাকা, সার, বীজ, কীটনাশক সবই বাজার থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। তাই গিরস্থি কইরা আগের মতো লাভ নাই। খালি খরচ আর খরচ।’  

1

বল্লভপুর গ্রামের মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘কৃষি অফিস শুধু প্রশিক্ষণ দেয়। কিন্তু কৃষি ঋণ দেয় না। আমরার অখন সহজ শর্তে ঋণের দরকার। কারণ ক্ষেতখলা করতে নগদ টেকা লাগে।’   

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় হাওরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে ধান কাটার মেশিন চালানো গেলেও ধান রোপণের মেশিন চালানো যায় না। কারণ হাওরের তলদেশের জমির মাটির গঠন নরম। তাই মেশিন কাঁদা-মাটিতে দেবে যায়। এজন্য ধান রোপণের মওসুমে ট্রাক্টর সেচ মেশিন জমিতে চালানো যায়। হাওরের নিচু জমিতে ধান রোপণের জন্য নতুন করে গবেষণা করে মেশিনারিজ অবিষ্কার করতে হবে। বোরো মওসুমে ধান রোপণের সময় ও ধান কাটার সময় কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. বশির আহম্মদ সরকার বলেন, ‘হাওর এলাকায় এখন কৃষি শ্রমিকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।  বোরো মওসুমে ধান রোপণের সময় ও ধান কাটার সময় এই সংকপ প্রকট আকার ধারণ করে। তারপরও বোরো মওসুম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে কৃষক জমিতে ধান লাগানোর সুযোগ পান। এখানকার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ধান রোপণের মেশিনের প্রয়োজন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়- চলতি বোরো মওসুমে সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতকসহ ১১টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে  ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে  ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর। প্রতিহেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে একদিনে ২৮ জন কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য  ৬০ লাখ ৯০ হাজার ৯৮০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। সারা জেলায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫০টি কৃষিজীবী পরিবার রয়েছে।