চালের বাজার বাড়ায় ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষের দাবি, চালের বাজারে নজরদারি না থাকায় দোকানদাররা ইচ্ছেমতো দাম হাতিয়ে নিচ্ছে। নীলফামারী জেলা শহরের কিচেন মার্কেটে চাল কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক বাবুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে চালের দাম বাড়লে সংসারের ব্যয় বেড়ে যাবে।’
নীলফামারী বড় বাজারের চাল বিক্রেতা মের্সাস অলিমা ট্রের্ডাসের মালিক মনোয়ার হোসেন বাবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করলেও এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে সব রকম চালের দাম কেজিতে বেড়েছিল ১ থেকে ২ টাকা। বর্তমানে এই বাজার ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।’
জেলা মিল চাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ধানের দাম কিছুদিন আগে একটু বেড়েছিল। তবে খুচরা বাজারে যে হারে চালের দাম বেড়েছে সেই হারে বাড়েনি মোকামে চালের দাম। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ধানের দাম বাড়ানোর কথা বলে ক্রেতাদের কাজ থেকে চড়া দামে চাল বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, মিনিকেট চাল গত সপ্তাহে ছিল ৪৮ টাকা কেজি, এখন প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। পাইজাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা তা এখন প্রতিকেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৩৮ টাকা হয়েছে। পাশাপাশি আটাশ চাল ২৫ থেকে ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সাইফুউদ্দিন অভি বলেন, ‘জেলায় ৫৭৮টি মিল ও চাতাল আছে। এর মধ্যে অটো রাইসমিল ১৮টি ও শুধু সেদ্ধ-শুকানোসহ মিল চাতাল ৫৬০টি রয়েছে। প্রয়োজনীয় ধান ও চাল বাজারে মজুত রয়েছে। কী কারণে চালের দাম বেড়েছে তা আমার জানা নেই।’
কুড়িগ্রামেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করলেও খুচরা বাজারে এখনও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। সরকারিভাবে আমন সংগ্রহ অভিযান চললেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। কুড়িগ্রাম জেলা শহরের বিভিন্ন চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, মিলারদের কাছ থেকে (মিল ও চাতাল মালিক) সরকারের চাল সরবরাহ অভিযান চলায় গত এক সপ্তাহ আগে সব রকম চালের দাম বাড়তে থাকে। তবে গত তিনদিন আগে থেকে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রামের প্রধান চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা করে কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক আসাদুজ্জামান আনু বলেন, ‘প্রতি বছর সরকার কর্তৃক চাল সংগ্রহকালীন সময় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সরকারি কেনা দাম বেশি থাকায় এ সময় কৃষক ও মিল মালিকরা আড়ত ও খুচরা বাজারে চাল ছাড়তে চান না। ফলে চালের দাম বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে খুচরা বাজারেও চালের দাম কমবে।’
কুড়িগ্রাম পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, ‘চালের দাম কমা বা বাড়া নির্ভর করে মোকাম মালিকদের ওপর। তারা দাম বাড়ালে খুচরা বাজারেও এর দাম বেড়ে যায়। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। দাম কমলে আমরাও কমাবো।’
সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের ফলে চালের দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবিকে নাকচ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মহিবুল হক বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখন তা কমতে শুরু করেছে। আমন সংগ্রহ অভিযান আগামী ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে। আমন সংগ্রহের কারণে দাম বেড়ে গেলে এতো তাড়াতাড়ি তা আবার কমতে শুরু করার কথা নয়। আসলে ধানের দাম কিছুটা বাড়ার কারণেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছিল।’