মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শুরু হয়। পরবর্তীতে সেটি সার্বজনীন মেলায় পরিণত হয়। এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো সদর উপজেলার মনু নদীর মনুমুখ এলাকায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখন হয় শেরপুরে।
মাছের মেলার মধ্যে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ। মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ কিনতে এসেছেন পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা। একেকটি আড়তে মাছের বাক্স-পেটরা খোলা হয়, আর দরদাম হাঁকা নিয়ে চলছে চিৎকার-চেঁচামেচি।
মেলায় আগত ক্রেতা শাহেদ আহমদ, এম এ রকিব, নাজমুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা মাছ ও দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ পাওয়া যাওয়ায় মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন তারা। মেলায় পছন্দের মাছ বিপুল পরিমাণ পাওয়া গেলেও দাম অনেকটা বেশি বলে জানান তারা।
মাছ বিক্রেতা রশিদ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা মাছ এই মেলায় নিয়ে আসি। তবে মেলা উপলক্ষে মাছের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় বেশি মাছ সংগ্রহ করতে হয়। ’
শেরপুর এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী করিম মিয়া,আব্দুল আলিম ও রফিক মিয়া জানান, ‘প্রথম দিন একটি বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই বাঘইড় মাছের দাম ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্য চাওয়া হয়।’
মাছ ব্যবসায়ী জাকের মিয়া বলেন,‘প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মাছ নিয়ে এসেছি এই মাছ মেলায়। তবে এসব মাছের মধ্যে বেশির ভাগই হাওর ও নদী থেকে সংগৃহীত টাটকা মাছ।’
রাজশাহী থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী মো. শরিফ মিয়া ও জব্বার মিয়া জানান, প্রায় ৩০ লাখ টাকার রুই, কাতলা ও ব্রিগেড মাছ নিয়ে এসেছেন মাছের মেলায়। এসব মাছ গত তিন বছর থেকে খামারে পরিচর্যায় বড় করে মেলায় নিয়ে এসেছেন তারা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সাখাওয়াত হোসেন লিমন বলেন, ‘প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ নিয়ে এসেছি মেলায়। প্রথম দিনে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় দিনে ভাল বিক্রি হয়েছে।’
এই মেলা মাছের মেলা নামে পরিচিত হলেও মাছ মেলায় রয়েছে ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী, খেলনা সামগ্রীসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান। মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মূল মেলার আগে ও পরে সময় বাড়িয়ে এটিকে তিন দিনের আয়োজনে রূপ দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ্জালাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'শেরপুরের মেলায় এবার জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য বন্ধ রয়েছে। গত বছরও জুয়া ও যাত্রার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।'