শেষ রাতে লোকালয়ে বাঘের বিচরণ, গর্জনে ভীত গ্রামবাসী

বাঘ (ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

রাত শেষ হয়নি, কুয়াশামাখা শেষ রাতের জড়তা কাটতে তখনও অনেক সময় বাকি। কিন্তু আধো-ঘুম আধো-জেগে ওঠা গ্রামবাসীর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো নীরবতা ভেদ করা গগনবিদারী গর্জনে। বাদে বাদে ভেসে আসা সেই হুংকারে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো সবাই। ধীরে ধীরে ভোরের আলোর দেখা মিললেও মেলেনি জনসমাগম। একপর্যায়ে চারপাশ আলোকিত হওয়ার পর হাতে লাঠি নিয়ে একযোগে বের হয়ে আসেন গ্রামবাসী। 

সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের ঘটনা এটি। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতটি আতঙ্কেই কাটিয়েছেন পানিরঘাট ও সোনতলা গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই দুই গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে। স্থানীয়দের ধারণা, রাতে বগী-শরণখোলা ভারানী খাল পার হয়ে বন থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে দিনব্যাপী খুঁজেও আর বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে লোকালয়ে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বনবিভাগ। হ্যান্ডমাইক ও মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে বনবিভাগ, ওয়াইল্ড টিম, টাইগার টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি পেট্রোলিং (সিপিজি) গ্রুপের সদস্য ও শত শত গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে বাঘ তল্লাশিতে নেমে পড়েন। তবে বাঘের কোনও সন্ধান মেলেনি।

এই প্রসঙ্গে ওয়াইল্ড টিমের শরণখোলার মাঠ কর্মকর্তা মো. আলম হাওলাদার বলেন, ‘সকালে গ্রামবাসীর মাধ্যমে বাঘ আসার পেয়ে ভিটিআরটি ও সিপিজি গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এসময় বনবিভাগকে খবর দেওয়া হলে শরণখোলার রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বনবিভাগের একটি দলও সেখানে আসেন। পরে গ্রামবাসীদের নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বাঘের কোনও সন্ধান না পেলেও বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে।’

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীনের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাঘ আসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। বনজঙ্গল ও পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে রাতে বাঘটি বিচরণ করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিকালে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাঘটি বনে ফিরেছে।’

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, ঘটনার পর বনবিভাগের সদস্যরা এলাকাটি বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে।