গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন বাগান মালিক ও আমচাষির সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে আমের অব্যাহত দরপতন, আম মৌসুমে ফরমালিন মেশানো ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ও গণহারে ফরমালিন মেশানোর অপপ্রচার, উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম পাওয়ায় বাগান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এখানকার চাষিরা।
কানসাটের আমচাষি সামিউজ্জোহা বলেন, ‘গণমাধ্যমে ফরমালিনের অপপ্রচারের কারণেও আমের দাম পাওয়া যায় না। আর এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আমশিল্পই এখন ধ্বংসের মুখে।’
তবে আমবাগান চাষিরা যাই বলুন না কেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছরই বাড়ছে আম বাগানের সংখ্যা। এ বছর জেলায় ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবার আমচাষের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩শ’ হেক্টর বেশি।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে আমবাগান। এখানে রয়েছে আশ্বিনা, হিমসাগর, দুধসর, কালীভোগ, তোতাপরীসহ প্রায় দুইশো’র বেশি জাতের আম। চলতি মৌসুমে তেমন একটা কুয়াশার আধিক্য না থাকায় প্রায় ৮০ ভাগ বাগানের গাছেই নতুন মুকুল এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো আছে। জেলার আমবাগানগুলোতে মুকুলও এসেছে ভালো। তবে আবহাওয়া খারাপ হলে মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্প্রে করছি।’
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গতবারের মতো এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
তিনি বলেন, গতবছর জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। এবার আরও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।’
এলাকার এক ব্যবসায়ী পাটিগণিতের হিসাব কষে বলেন, সাধারণ একটি ট্রাকে ৫ টন পণ্য পরিবহন করা যায়। সে হিসেবে প্রতি হেক্টরে আমের যে ফলন হয় (৯ থেকে ১০ মে.টন) তা পরিবহনে দুটি ট্রাক লাগে। আর এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হচ্ছে। যদি ফলন গত বছরের মতোও হয় তাহলে এ বছর জেলার সব আম পরিবহন করতে লাগবে কমপক্ষে ৬১ হাজার ট্রাক।