নির্বাচনে ব্যবহারের শঙ্কায় রোহিঙ্গা শিবিরে সতর্কতা

 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পনির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ৩০টি শরণার্থী শিবিরে। আগামী ২৪ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনের সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হতে পারে শঙ্কায় নিরাপত্তা কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে।

টেকনাফ নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মোট তিন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী (নৌকা), বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ (আনারস) ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম  (মোটরসাইকেল)। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আট জন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮জন। তার মধ্যে পুরুষ ৭২ হাজার ৬৫৭ ও নারী ৭৩ হাজার ১৫১জন। 

উখিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হামিদুল হক চৌধুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পাঁচ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কামরুল নেছা বেবী। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫জন। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী।রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ভোট উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাতে কোনও পক্ষই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে সেবিষয়ে শরণার্থী শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রয়েছে। বিশেষ করে যেসব রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ বেড়েছে, সেখানে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়ান্দার নজরদারিও।’ 

টেকনাফ নিবন্ধিত নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, 'আগের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।’  

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, ‘আমাদের রোহিঙ্গা শিবিরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। হয়তো নির্বাচনকে সমানে রেখে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আগে থেকেই সব রোহিঙ্গার কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ নিবার্চনের কোনও কাজে অংশ না নেয়।’

র‍্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্প ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, ‘নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কেউ যেন ফায়দা নিতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গা শিবিরে র‍্যাবের আলাদা দুটি দল কাজ করছে। নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই সমস্যা হয়ে না দাঁড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র‍্যাব।’

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ‘কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গা শিবিরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় শিবির থেকে কোনও রোহিঙ্গাকে বের হতে দেওয়া হবে না। এ আসনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’