রংপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে কৃষি কর্মকর্তার যাবজ্জীবন

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকিরুল ইসলাম মিলনঅসুস্থ মায়ের মাথায় পানি দেওয়ানোর কথা বলে বাসায় ডেকে এনে অষ্টম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম মিলনকে দোষি সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ ভিকটিমকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ৪ জুলাই রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকে পার্শ্ববর্তী বাড়ির আনসার আলীর ছেলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম মিলন বাসায় ডেকে আনে। তার মা গুরুতর অসুস্থ ও মাথায় পানি দিতে হবে এ কথা বলে মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসে সে। পরে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা আব্দুল মালেক বাদী হয়ে বদরগজ্ঞ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক আসামি জাকিরুল ইসলাম মিলনকে দোষি সাব্যস্ত করে এ রায় দেন।

সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনাকারী আইনজিবী বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। দেরিতে হলেও ভিকটিম ন্যায়বিচার পেয়েছে। এ রায় ধর্ষকদের জন্য একটি বার্তা বলেও মনে করি আমি।’

এদিকে বিচারক রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে এ মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলামের ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘তিনি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর  তাৎক্ষণিক ভাবে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করেননি। এক মাস পর করিয়েছেন। ফলে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ডাক্তারও সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেননি। তিনি ভিকটিমের পরনের কাপড় পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা করেন নাই।’

বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ‘আসামি তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বাসায় ডেকে এনে এক শিশুর হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করেছে এটা জঘন্য অপরাধ। মামলায় ১৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছে। তারা সন্দেহাতীতভাবে মামলাটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। কখনও সাক্ষীদের জেরা করার সময় পারিবারিক বিরোধ, কখনও জমি নিয়ে বিরোধ, আবার কখনও প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধের কথা বলেছেন। তারা আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য কোনও এভিডেন্স উপস্থাপন করতে পারেননি।’ বিচারক ঘটনার সময় আসামির বয়স বিবেচনা করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিলেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে সরকার পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, ‘বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ডাক্তারকে ভর্ৎসনা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, দেশে ধর্ষণের ঘটনার যতগুলো মামলা হয় তার মধ্যে শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মিথ্যা । ফলে আসলে যারা ধর্ষণের শিকার হয় তাদের বিচার করতে বিলম্ব হয়ে যায়।’

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশীদ চৌধুরী রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।