রাজশাহীর বাজারে উঠেছে গুটি আম, ভালো জাতের অপেক্ষায় ক্রেতা-বিক্রেতা

রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে গুটি আমরাজশাহীতে শুরু হয়েছে প্রতীক্ষিত আম পাড়া। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী রাজশাহীতে বুধবার থেকে নামানো শুরু হয়েছে গুটি জাতের আম। জাতের প্রকারভেদ অনুযায়ী প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য জাতের আমও পাড়া হবে। বিষমুক্ত আম ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে বাজারে আম উঠতে শুরু করলেও বাজার জমজমাট হতে আরও পাঁচ থেকে সাতদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকেই আম পাড়া শুরু করে আমচাষী ও বাগান মালিকরা। নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবারে শুধুমাত্র গুটি আম পেড়েছেন আমচাষী ও বাগান মালিকরা। জাতের প্রকারভেদ অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে অন্যান্য জাতের আমগুলো নামাতে পারবেন তারা।রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে গুটি আম

জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, গোপালভোগ ২০ মে থেকে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, খিরসাপাত ও হিমসাগর ২৮ মে, লক্ষ্মণভোগ ও লখনা ২৫ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৬ জুন, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা ১ জুলাই বাগান থেকে পাড়া যাবে।

রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালীর সমসাদিপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক একইসঙ্গে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ী। তার এবার এক হাজারটির মতো আমের গাছ লিজ নেওয়া আছে। তিনি বললেন, ‘গত বছরের তুলনায় আমের উৎপাদন এবার অনেক কম। এরপর গত ১৩ মে’র ঝড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ আম ঝরে পড়ে গেছে। তারপরও যদি দাম ভালো থাকে তাহলে রাজশাহীর আমচাষিরা লাভবান হবেন।’ শুধু আব্দুর রাজ্জাক নন, তার মতো সব আমচাষি ও বাগান মালিকরাই বলছেন, এবার আমের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে গুটি আম

রাজশাহীর বিখ্যাত আমের বাজার বানেশ্বর বাজার। এই বাজার থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আম দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। প্রায় ১৫০টি আমের আড়তদার রয়েছে এই বাজারকে কেন্দ্র করে। তারা বলছেন, প্রথম দিন হওয়ায় বাজারে কম আম উঠেছে। প্রথমদিনে গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ। তাদের ভাষ্য, আর পাঁচ ছয় দিন পর জমে উঠবে আমের বাজার। বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মন্টু জানান, আমের বাজার তেমনভাবে জমে উঠেনি। কারণ গুটি জাতের আম এখনও পুরোপুরি পাকেনি। যেগুলো পেকেছে তার অল্প সংখ্যাক আম বাজারে এসেছে। আম ব্যবসায়ী লিটন জানান, সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সাত ভ্যান গাড়ি আম বাজারে নিয়ে এসে তা বিক্রি করাও হয়ে গেছে।রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে গুটি আম

প্রথম দিনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুয়েল মামুন বানেশ্বর বাজারে এক মণ আম কেনার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু গুটি জাতের ভালো আম না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। তিনি জানান, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রথম দিন আম কিনেছেন। আমাদের মতো খুচরা ক্রেতাদের ভালো আমের জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

রাজশাহী নগরীর শালবাগান, সাহেববাজার, বিনোদপুর, হড়গ্রাম বাজারে প্রথম দিনে তেমন সংখ্যক আম উঠেনি। নগরীর শাল বাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী মোশরারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাজারে কেউ আম উঠায়নি। কারণ গুটি জাতের আমের চাহিদা তেমন নেই। তাই বাগান থেকে পাইকারি মূল্যে দেশের অন্য এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এছাড়া ভালো জাতের আমের চাহিদা প্রচুর রয়েছে। সেগুলো প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারে নিয়ে আসবো।’রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে গুটি আম

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক জানান, ‘ঝড়ে আমের কোনও ক্ষতি হয়নি। স্বাভাবিকভাবে যে আমগুলো ঝরে পড়ে সেগুলোই শুধু ঝড়ে পড়েছে। ফলে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই হবে। রাজশাহী জেলায় এবছর সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আবদুল কাদের বলেন, ‘আম ভাঙার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’