মেরে কাঠমিস্ত্রিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে চেয়ারম্যান বললেন ‘একটু শাসন’ করেছেন

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান মারধর করে কবির হোসেন নামের এক কাঠমিস্ত্রিকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধে গতকাল বুধবার বিকালে পরমেশ্বর্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই কাঠমিস্ত্রিকে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান দাবি করেছেন, জমি নিয়ে বিরোধ মেটাতে তিনি ওই কাঠমিস্ত্রিকে ‘একটু শাসন’ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মতিন মোল্লার ছেলে কাঠমিস্ত্রি কবির হোসেন সরকারি ১ একর ৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ভোগদখল করে আসছিলেন। সম্প্রতি চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান প্রভাব খাটিয়ে ওই জমির লিজ বাতিল করে তার আত্মীয় কাউসারের নামে লিজ নবায়ন করে নেন। লিজকৃত জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। লিজ বাতিলের আগে পুকুরে কাঠমিস্ত্রি কবির হোসেন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, শিং ও কই মাছ চাষ করেন। সোনারগাঁ উপজেলা ভূমি কার্যালয় কবির হোসেনের পক্ষে ওই চাষকৃত মাছ ধরার জন্য রায় দেয়। এ বিষয়টি চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান জানতে পেরে গতকাল বুধবার দুপুরে সন্ত্রাসী আনোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল নিয়ে ওই পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে কবির হোসেন সোনারগাঁ থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এতে চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান কবির হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে বিকালে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসে কবির হোসেনকে পেয়ে পিটিয়ে আহত করেন। কবিরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার করে তাকে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

আহত কাঠমিস্ত্রি কবির হোসেনের ছোট ভাই আওলাদ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বিরোধকৃত সম্পত্তি আমরা ভোগদখল করে আসছি। সম্প্রতি নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ানের চোখ পড়ে ওই জমির দিকে। চেয়ারম্যান তার প্রভাব খাটিয়ে আমাদের লিজ বাতিল করে তার আত্মীয় কাউসারের নামে লিজ নিয়ে নেন। আমরা চেয়ারম্যানের লিজ বাতিলের জন্য আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। মামলা থাকার পরও চেয়ারম্যানের পালিত সন্ত্রাসী আনোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে আমাদের মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। পুলিশ নিয়ে আসার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান নিজ হাতে আমার ভাইকে পিটিয়ে আহত করে।’

অভিযুক্ত নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘একটি লিজকৃত জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলছে। এ ঝগড়া বিবাদ মীমাংসার জন্য একটু শাসন করেছি।’

সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’