পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ২ মাদকসেবীকে গলা কেটে হত্যা

পুলিশ হেফাজতে তরিকুল

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই বন্ধুকে গলা কেটে হত্যা করেছে তাদেরই আরেক বন্ধু। তারা তিনজনই মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা।

শনিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেনর পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম।

তিনি জানান, ৩০ মে বীরগঞ্জ উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বালাপাড়ায় মাটির রাস্তার পাশে হানিফুর রহমান (২৪) ও বিপ্লব চন্দ্র রায় (২৩)এর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় জড়িত তাদেরই বন্ধু তরিকুল ইসলাম (২৭)। তরিকুল  বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শতগ্রাম (পালাপাড়া) এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জানান, হত্যার শিকার দু’ব্যক্তি ও আসামি তিন জনই মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা এবং তারা বন্ধু। ঘটনার আগের দিন ২৯ মে দুপুর ২টার দিকে মোটরসাইকেলে চড়ে তারা তিন জন নীলফামারী জেলার দেবীগঞ্জ বাজারে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসামি তরিকুল ইসলাম দেবীগঞ্জ বাজারের কামারের দোকান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো চাকু কিনে নিজের কোমরে লুকিয়ে রাখে। এরপর তারা নেশার দ্রব্য কিনতে রাত ৯টার দিকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে। সেখান থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ও দুই বোতল ফেনসিডিল কেনে এবং তিন জনে মিলে সেবন করে।

পুলিশ সুপার জানান, এরপর তারা মোটরসাইকেলে চড়ে যদুর মোড়ের দিকে রওনা দেয়। আসামি তরিকুল মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিল, আর চালাচ্ছিল হানিফুর রহমান। ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, তরিকুল লুকিয়ে রাখার চাকু দিয়ে বিপ্লবের গলায় কয়েকটি টান দেয়। মোটরসাইকেল চালক হানিফুর রহমান আসামি তরিকুলের  কথা মতো মোটরসাইকেল স্লো করলে তার গলায়ও চাকু দিয়ে চাকু দিয়ে আঘাত করে সে। তখন মোটরসাইকেলসহ ৩ জনই মাটিতে পড়ে গেলে তরিকুল মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, জবানবন্দিতে তরিকুল ইসলাম জানিয়েছে, সে একটি কোম্পানির সোলার সেচ পাম্পের অপারেটর। তার কাছে কালেকশনের টাকা থাকতো। এ টাকা থেকে হানিফুর রহমান ১৮ হাজার টাকা ধার দেয় এবং দীর্ঘদিন ধরে টাকা ফেরত না দিয়ে টালবাহানা করছিল। এছাড়াও হানিফুর ও বিপ্লব নেশার দ্রব্য কেনার জন্য প্রায়ই তরিকুলের কাছে টাকা দাবি করতো। ঘটনার দিনও তারা নেশা করার জন্য তরিকুলের কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করেছিল।

পুলিশ জানায়, গত ১৩ জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বীরগঞ্জ শালবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা তরিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বীরগঞ্জ থানা পুলিশ।  তার দেওয়া তথ্য মতে ঘটনায় ব্যবহৃত চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বীরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বনাথ দাস জানান, ২ জনকে গলা কেটে  হত্যার পর থেকে তরিকুল ইসলাম আত্মগোপনে ছিল। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে প্রথমে আটক করা হয়। ১৪ জুন তরিকুলকে আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

উল্লেখ্য, নিহত দুজনের মধ্যে বিপ্লব চন্দ্র রায় (২৫) দেবীপুর খোলাভিটা এলাকার রাজেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে ও হানিফুর রহমান (২৮) একই উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের মদনপুর আমতী এলাকার আজাহার আলীর ছেলে। এই ঘটনায় নিহত হানিফুর রহমানের বড় ভাই হালিমুজ্জামান হালিম বাদী হয়ে  মামলা দায়ের করেন।