ভিটে ছাড়া করতে মাকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো ছেলে ও বউ

হাফেজা খাতুননিজের ঘরটা আরেকটু বড় করা দরকার। কিন্তু, পাশে মায়ের ঝুপড়ি ঘর। ঝুপড়িটা সরাতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে ছোট ছেলে ফারুক। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বৃদ্ধ মায়ের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছিলেন তিনি। মায়ের বদনার পানিতে মরিচের গুড়া মিশিয়ে দেওয়া, ঝুপড়ির একাংশ ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন সময় মাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে ফারুক ও তার স্ত্রী ইনসানা বেগমের বিরুদ্ধে। তবে এবার ঘরের জায়গাটুকু নিতে মাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। 

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের গলেহা ফুলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। মারধরের শিকার বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন বর্তমানে আহতাবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাফেজা খাতুন জানান, ফুলপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। স্বামী সালাউদ্দিন মারা গেছেন ১১/১২ বছর আগে। ছেলেমেয়ে ১০ জন। পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। মেয়েদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় দুই ছেলে পঞ্চগড় শহরে বাড়ি করে থাকেন। বাকি তিন ছেলে বাবার ভিটেতেই আছে। বাড়িতে থাকা তিন ছেলের মধ্যে রয়েছেন নুরু মিয়া, শফিউল্লাহ ও ফারুক। যে যার মতো আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

তিনি আরও জানান, ছোট ছেলে ফারুকের ঘর ঘেঁষে একটি বেড়া চাটাই দিয়ে তৈরি ঝুপড়িতে তিনি থাকেন। খাওয়া-দাওয়া করেন ছেলে শফিউল্লাহর ঘরে। স্বামীর ভিটে ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে রাজি নন। তবে ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী ঘরের পাশ থেকে হাফেজাকে সরাতে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন হাফেজা। তাকে কারণে-অকারণে বকাঝকা, এমনকি মারধরও করা হয়েছে।

বৃদ্ধা হাফেজা বলেন, শনিবার দুপুরে টয়লেটে যাওয়ার রাস্তায় আবর্জনা জড়ো করে রাখে ফারুকের স্ত্রী ইনসানা বেগম। খুব কষ্টে সেই আবর্জনা একটু সরিয়ে টয়লেটে যাওয়ার সময় ইনসানা হাত থেকে পানি ভর্তি বদনা নিয়ে ভেঙে ফেলে। পরে ছেলে ফারুক গালাগালি করে মারধর করতে চায়, এমনকি টয়লেটেও যেতে দেয়নি। এর প্রতিবাদ করলে ফারুকের স্ত্রী ইনসানা আমার বুকের মধ্যে কিল ঘুষি দিতে থাকে। চিৎকার করলে অপর ছেলে শফিউল্লাহ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধা ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমার ছেলে ফারুক, তার স্ত্রী ইনসানা ও নাতি হৃদয় আমার ওপর খুব নির্যাতন করে। ইনসানা আমার বদনার পানিতে মরিচের গুড়া মিশিয়ে রাখে। ১৪/১৫ দিন আগে হৃদয় আমার কুড়ে ঘরটার একাংশ ভেঙে দিয়েছে। এসময় একটা বাঁশ ভেঙে আমার মাথায় পড়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। কিন্তু ফারুক আমার চিকিৎসা করায়নি।

তিনি বলেন, আমি কানে কম শুনি, অসুস্থ, চলতে পারি না। এই বয়সে ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সহ্য হয় না।

হাফেজা খাতুনের ছেলে শফিউল্লাহ বলেন, আমার মা বাবার ভিটেতেই ছোট ঘর তুলে থাকেন। আমার বাড়িতে খাওয়াই। তিনি ওই ভিটে ছাড়া কোথাও থাকবেন না। এটাই ফারুকের সহ্য হয় না, এ জন্য সে মাকে মারধর করে। মাকে মারধর করার ঘটনা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। আমরা সব ভাই-বোন তার বিচার চাই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারুক। তিনি বলেন, আমি মাকে কখনও মারধর করিনি। ভিটের জমি নিয়ে ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে, আদালতে মামলাও চলছে। এ জন্য তারা মাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

কামাত কাজলদিঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ফারুক উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক, এটা সবাই জানে। তারপরও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছি।

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আক্কাছ আহমদ বলেন, আমি হাসপাতালে পুলিশ পাঠাচ্ছি। খোঁজ নিয়ে বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।