‘বান আসুক আর খরা হউক, হামার কুনো চিন্তা নাই’

‘ধারদেনা করি ফসল আবাদ করি। কিন্তু খরা, বানসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হইলে কুনো ফসলই পাই না। গোটায় লস (লোকসান)। এইরকম দুশ্চিন্তা নিয়া হামেরা ফসল আবাদ করি। কিন্তু বান আসুক আর খরা হউক, এখন হামার আর কুনো চিন্তা নাই। এখন হামেরা ফসলের বীমা করিয়া এইরকম পরিস্থিতি হইলে ক্ষতিপূরণ পাছি। খরা হউক আর বান হউক, হামার আর লস নাই।’

প্রথমবারের মতো শস্যবিমার ওপর বোরো আবাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সম্ভুগাঁও গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ।

মামুনুর রশিদ জানান, এক একর জমিতে এবার বোরো আবাদ করেন তিনি। শেষ সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে তার বোরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অর্ধেক ধানও পাননি তিনি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন। কিন্তু শস্যবিমার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে এখন আর তার কোনও লোকসান নেই।

বীরগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর কল্যাণী গ্রামের কৃষক আকসেদ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন তিনি। এই এক বিঘা জমির জন্য এবারই প্রথম শস্যবিমা করে রেখেছিলেন। ঘন কুয়শার কারণে তার ধানে পোকা ধরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৫০ মণ ধানের স্থলে ধান পান মাত্র ১৫ মণ। এতে লোকসানের মুখে পড়েন। আজ শস্যবিমা থেকে সেই লোকসানের টাকা পেলেন তিনি।

একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন উপজেলার এলাইগাঁও গ্রামের কৃষানী মেরিনা আকতার, বোয়ালমারি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমানসহ বোরো আবাদ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য কৃষকরা।

এদিকে এবারের জাতীয় বাজেটে সরকার শস্যবিমা চালুর ঘোষণা দিলেও সরকারিভাবে সেই বিমা চালুর আগেই শস্যবিমা পেতে শুরু করেছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। আবহাওয়া জনিত কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই প্রথম দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ১৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে শস্যবিমা প্রদান করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শস্যবিমার টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অধিক তাপমাত্রা, নিম্ন তাপমাত্রা, আর্দ্রতাসহ আবহাওয়া সম্পর্কিত ঝুঁকির জন্য এই শস্যবিমা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সার্বিক পরামর্শে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (এসডিসি) ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের অর্থায়নে এবং সিনজেন্টা ফাউন্ডেশন ফর সাইটাইনেবল অ্যাগ্রিকালচার ও ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)-এর সহযোগিতায় এই শস্যবিমা প্রদান করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে শস্যবিমা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ সোয়েব, এসডিসি’র প্রতিনিধি ড. সৈয়দা জিনিয়া রশীদ, সুরক্ষা প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আমিনুল মবিন, সিনজেন্টা ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফরহাদ জামিল, বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন অধিকারী, গ্রীন ডেলটা ইন্স্যুরেন্সের আলী তারেক পারভেজ প্রমুখ।

শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে আবহাওয়াজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ জন কৃষককে শস্যবিমার অর্থ প্রদান করা হয়।